ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২৩:২৭:৩৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

তিউনিসিয়ার নারীদের কোঁকড়া চুলের বিপ্লব

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:৫১ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৫ শনিবার

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

তিউনিসিয়ার মুনা জেবালি বহুদিন ধরে ফ্ল্যাট আয়রন দিয়ে তাঁর ঘন কোঁকড়া চুল সোজা করতেন। কিন্তু বিশ্বজুড়ে এখন নারীরা তাঁদের প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক চেহারা নিয়ে থাকা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চ্যালেঞ্জ করছেন। এদিকে ছোট্ট ছেলেকে দেখে অবশেষে মুনাও নিজের কোঁকড়া চুলকে ভালোবাসতে শিখেছেন।

নিজের কোঁকড়া চুল ফেরত পেতে তাই মুনা উত্তর আফ্রিকার দেশটির এমন একটি বিউটি স্যালুনে গেছেন, যেখানে চুলের প্রাকৃতিক ধরন ঠিক রেখে নানা সেবা দেওয়া হয়।

রাজধানী তিউনিসে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মুনা বলেন, ‘বছরের পর বছর আমাকে শেখানো হয়েছে, কোঁকড়া চুলে পরিপাটি দেখায় না। তাই এটিকে সোজা করতে হবে অথবা পেছনে টেনে বেঁধে রাখতে হবে।’

অবশেষে এই মা তাঁর ছেলের মাথায় ছোট্ট ছোট্ট কোঁকড়া চুল গজানো শুরু হতে দেখে নিজের স্বাভাবিক কোঁকড়া চুল মেনে নিতে পেরেছেন। তিনি বলেন, ‘তখনই আমি নিজেকে বললাম, আরে, আমি তো ভুল ভাবতাম, কোঁকড়া চুল তো সুন্দর।’

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে দেশে সৌন্দর্যের মানদণ্ড অনেকটা বদলে গেছে। বিউটি স্যালুন ও প্রসাধনী ব্র্যান্ডগুলো মানুষের স্বাভাবিক সৌন্দর্যের পক্ষে প্রচার চালাচ্ছে এবং দিন দিন এ প্রবণতা বাড়ছে। যদিও এ বিষয়ে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। এ নিয়ে থাকা ট্যাবু (নিষিদ্ধ বিষয় বা অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা) জয় করা এখনো বহুদূর।

তিউনিসিয়ার অনেক নারী এখনো বিয়ে বা গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান আয়োজনের আগে তাড়াহুড়া করে চুল সোজা করান, কেউ কেউ চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার আগে নিজেদের চুল সোজা করান। তাঁদের ভয়, চাকরির সাক্ষাৎকারের সময় যদি তাঁরা চুল সোজা না রাখেন, তবে হয়তো চাকরিই হবে না।

চুল সোজা করার রাসায়নিকে ক্যানসারের ঝুঁকি

নিজের প্রাকৃতিক কোঁকড়া চুল যেমন আছে তেমন রাখার পক্ষে যাঁরা আছেন, তাঁরা মনে করেন, কোঁকড়া চুল নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগার মূলে রয়েছে একধরনের বৈষম্য। তাঁরা একে ‘টেক্সচারিজম’ নাম দিয়েছেন।

তিউনিসীয় ফরাসি সাংবাদিক নাওয়াল বেনালি বলেন, ‘আপনি কোঁকড়া চুল থেকে যত বেশি দূরে সরে যাবেন, সামাজিকভাবে আপনার গ্রহণযোগ্যতা তত বাড়বে। কারণ, এটিকে সঠিক চেহারা ও নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার একটি সূচক হিসেবে গণ্য করা হয়।’

উত্তর আফ্রিকায় বর্ণবাদ নিয়ে একটি পডকাস্টেরও উপস্থাপনা করেন বেনালি। তিনি বলেন, সৌন্দর্যের এ মানদণ্ড প্রথম নির্ধারিত হয় ‘শ্বেতাঙ্গ, পশ্চিমা বিশ্বে’। সোজা চুল নিয়ে এ অতিরিক্ত আগ্রহকে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও আফ্রিকান বৈশিষ্ট্য মুছে ফেলার চেষ্টা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তিনি।

নিজের স্বাভাবিক চেহারাকে গ্রহণ করার চেষ্টার পাশাপাশি স্বাস্থ্যগত কারণে নিজের আসল চেহারা বদলে ফেলা বিষয় নিয়েও বিতর্ক হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, চুল সোজা করার জন্য যেসব রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, সেগুলো থেকে নারীদের জরায়ু ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।

‘আমরা গর্বিত’

প্রজন্মের পর প্রজন্ম, বিশ্বজুড়ে লোকজনকে বলা হতো কোঁকড়া চুল সোজা করতে, বেঁধে রাখতে, কেটে ফেলতে বা অন্যভাবে ঢেকে রাখতে—না হলে কোথাও কোথাও স্কুল থেকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হতো বা চাকরিও চলে যেত।

করোনা মহামারির সময় যখন সবকিছু বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তখন মানুষ নিজেদের স্বাভাবিক চুল নিয়ে অনলাইনে নানা ভিডিও পোস্ট করত, এটা তখন একটি ‘ট্রেন্ডে’ পরিণত হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রে সাম্প্রতিককালের ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের প্রভাবে বিশ্বব্যাপী সেই ‘বিউটি ট্রেন্ড’ আবার ফিরছে।

তবে তিউনিসিয়ায় এমন কোনো আন্দোলন নেই। সেখানে নারী উদ্যোক্তারাই চুল নিয়ে মানুষের মানসিকতার ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তেমনই একজন সিরিন শেরিফ। তিনি ২০২১ সালে তিউনিসিয়ায় যাত্রা শুরু করা ‘কামানা’ নামে একটি প্রসাধনী ব্র্যান্ডের সহপ্রতিষ্ঠাতা। দেশটিতে সিরিনের কোম্পানি থেকেই প্রথম শুধু কোঁকড়া চুলের যত্নে স্বদেশি পণ্য উৎপাদন শুরু হয়।

সিরিন শেরিফ বলেন, ‘আমরা যখন শুরু করি, তখন বাজারে একমাত্র আমরাই বিশেষায়িত ব্র্যান্ড ছিলাম।’

কোঁকড়া চুলের বিপ্লব

কয়েক মাস পর ধাপে ধাপে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো কোঁকড়া চুলের যত্নে নিজ নিজ পণ্য বাজারে আনতে শুরু করে বলে জানান শেরিফ। আর এখন জিনিয়া ও লিলাস কসমেটিকসের মতো তিউনিসিয়ার বৃহৎ কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমান এই শিল্পে যোগ দিয়েছে।

সিরিন শেরিফের জন্য এ উত্থান একদিকে লাভজনক ব্যবসার সুযোগ, অন্যদিকে গভীর সামাজিক পরিবর্তনের একটি সূচক। তিনি বলেন, ‘মানুষকে নিজে যেমন তেমনই থাকতে উৎসাহিত করা, সামাজিক চাপের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করা ও তাঁদের নিজেদের স্বাভাবিক কোঁকড়া চুল গ্রহণ করতে উৎসাহিত করতে পারায় আমরা গর্বিত।’

কোম্পানি প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাঁরা প্রতিবছর ৪২ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি দেখছেন বলে জানান শেরিফ। বলেন, ‘আমরা একটি কোঁকড়া (চুলের) বিপ্লব শুরু করতে চাই।’