ঢাকা, মঙ্গলবার ১৬, এপ্রিল ২০২৪ ১২:৩৪:০৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রাজধানীতে ফিরেছেন ২১ লাখেরও বেশি সিমধারী ভাসানটেকে আগুন: মায়ের পর মারা গেলেন মেয়েও ফরিদপুরে বাস ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ১১ রাজধানীতে ফিরছে মানুষ লক্ষ্মীপুরে ঘরে ঢুকে নারীকে কুপিয়ে হত্যা ইন্দোনেশিয়ায় ভূমিধসে ১৫ জনের মৃত্যু

দুর্গম পাহাড়ের গভীর অরণ্যে ফুলের বাগান

বাসস | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার

দুর্গম পাহাড়ের গভীর অরণ্যে ফুলের বাগান

দুর্গম পাহাড়ের গভীর অরণ্যে ফুলের বাগান

প্রকৃতি থেকে ক্রমশ বিদায় নিচ্ছে শীত। বসন্তের আগমনের পূর্বেই হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার দুর্গম পাহাড়ের গভীর অরণ্যে ফয়জাবাদ চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোতে পসরা মেলে বসেছে আগুনঝরা বাহারী রঙের ফুলের মেলা। রমেনা আক্তার নামে এক নারীর শৈল্পিক চিন্তা-ভাবনা আর প্রচেষ্টায় সেখানে অপরূপ সৌন্দর্য্য সৃষ্টি করেছে, তার বাগানে হাসছে এখন নানান রঙের ফুল। এই ফুল দেখে যে কারও চোখ জুড়িয়ে যায়।
অর্ধশত জাতের ফুল রয়েছে তার বাগানে। চন্দ্রমল্লিকা, সাদা ডালিয়া, হাজারী গোলাপ, ডেইজি, পপি, সুইটিলিয়াম, লপিন, ইনকা, ক্যালেন্ডুলা, সিলভিয়া, হেলিক্রিসাম, জারবেরা, পিটুনিয়া, জিনিয়া, দোপাটি, কলাবতিসহ রয়েছে নানা জাতের ফুলের সমাহার। প্রবেশ পথেই থাকা গোল্ডেন শাওয়ার দেখে মুগ্ধ হন সবাই। সুইটিলিয়াম ফুলগুলোর নানান রঙের মিশ্রনে সৃষ্টি করেছে অপরূপ দৃশ্য। বড় বড় সূর্যমুখীগুলো লাগানো হয়েছে বাগানের বিভিন্ন প্রান্তে। এক সারীতে বিভিন্ন রঙের গ্লাডিওলাসগুলো সূর্য়ের আলোয় ঝিকমিক করছে। হলিহক ফুলটির সৌন্দর্য্য ভিন্ন রকমের।
দিনের আলোর সাথে-সাথে ফুল ও গাছগুলোর রঙ বদলায়। দুপুরে সেখানকার দৃশ্য হয় দেখার মত। সকাল বেলার দৃশ্য যে কারও মন ভাল করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। তবে বিকেল বেলা ফুলগুলো দেখে কিছুটা বিষন্নতা দেখা দেয়। সারাদিন ফুলগুলোতে উড়ে বেড়ায় বিভিন্ন রকমের প্রজাপতি। মৌমাছি আসে মধু আহরণে। শুধু বাগানের জমিই নয়। বাংলোর বারান্দার টবেও রয়েছে নানান জাতের ফুল ও গাছ।
ফয়জাবাদ চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোটি দুর্গম পাহাড়ের গভীর অরণ্যে। যেন একটি নিরাপদ দূর্গ। সেখানেই বসবাস করেন বাগানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ গোলাম সাকলাইন। জেমস ফিনলে কোম্পানির এই বাগানের ব্যবস্থাপকের বাংলো বিশাল এলাকা নিয়ে অবস্থিত হলেও সারাদিন বাগান নিয়ে চিন্তায় মগ্ন ব্যবস্থাকের কল্পনায়ও আসে এটিকে যে নান্দনিক রুপ দেয়া যায়। কিন্তু তার স্ত্রী রমেনা আক্তারের শৈল্পিকভাবনায় বাংলোটি হয়ে উঠেছে বাহারী ফুলের অরণ্যে। হঠাৎ করে কেউ এখানে আসলে চিন্তায় পড়ে যাবেন এটিকে চা বাগান, নাকি ফুলের বাগান?
চা বাগানের বাংলোর তিন একর জায়গা জুড়ে নানান রঙের ফুলের সমারোহ দেখতে আসেন অনেক লোকজন। ফুল দেখে সবাই মুগ্ধ হন। রমেনা আক্তারকে তারা মুগ্ধতা প্রকাশ করে কিভাবে বাগান গড়ে তুলেছেন তা জানতে চান। আবার অনেকেই বীজ ও চারা নেয়ার বায়না ধরেন। রমেনা আক্তার হাসি মুখে সবার বায়না রক্ষা করেন। ফলে রমেনার হাত ধরে এখন অনেক চা বাগানেই গড়ে উঠছে ফুলের বাগান। অনেক রিসোর্টও তার কাছ থেকে বীজ ও চারা নিয়ে বাগান করেছে। নিজের সৃষ্টিকে এভাবে বিলিয়ে দিয়েই আনন্দিত রমেনা আক্তার।
রমেনা আক্তার জানান, ১০ বৎসর যাবত তিনি এই বাগান করছেন। বহু জায়গা ঘুরে নানা জাতের ফুলের গাছ সংগ্রহ করেছেন। সুন্দর ও দুর্লভ ফুলের বীজ ও চারা সংগ্রহ করা তার নেশা। তার স্বামী সৈয়দ গোলাম সাকলাইন ১০ বছর পূর্বে যখন ফুলছড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক ছিলেন তখন তিনি শুরু করেন বাগান করা। সেখানেই তিনি বাগান করে সফলতা পান। এই সফলতায় মুগ্ধ হয়ে বিভিন্ন বাগান থেকে আসা তার স্বামীর সহকর্মীদের স্ত্রীরা তার কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে তারাও ফুলের বাগান গড়ে তুলেন। ৫ বছর পূর্বে তার স্বামী ব্যবস্থাপক হিসাবে যোগদান করেন ফয়জাবাদ চা বাগানে। ফলে বিশাল এলাকা নিয়ে বাংলো পেয়ে উৎসাহ বেড়ে যায় রমেনার। তিনি সেখানে আকর্ষনীয় ডিজাইন করে তৈরি করেন বাগান।
রমেনা আক্তার জানান, তিনি প্রতিবছর ফুলের বীজ সংরক্ষণে রাখেন। ফলে খুব বেশী খরচ করতে হয় না। তবে সার ও ওষুধের জন্য অল্প টাকা ব্যয় হয়। আর বাগানের দুই মালি শংকর ও মোহন লাল পরম মমতায় তার সাথে সারাদিন বাগান পরিচর্যায় কাজ করেন। অক্টোবরের ১৫ তারিখ থেকে শুরু হয় বীজ ও চারা লাগানোর কাজ। জানুয়ারির মধ্য সময় থেকে শুরু হয় ফুল আসা। মার্চ মাস পর্যন্ত বাগানে ফুলের আনাগোনা থাকে।
তিনি আরও জানান, আমার এখানে অধিকাংশই আনকমন ফুল। এখন আমি বীজ সংরক্ষণ করি। এর বাহিরে নতুন কোন জাতের সন্ধান পেলে তা সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। শুরুতে ঢাকা, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন নার্সারি থেকে বীজ ও চারা সংগ্রহ করেছি। বাগানে শুধু জৈবসার ব্যবহার করি। এই অঞ্চলে অনেকেই সৌখিনভাবে ফুলের বাগান করলেও বাণিজ্যিকভাবে ফুল আবাদ করা সম্ভব। বিশেষ করে গাদা, গোলাপ ও গ্লাডিওলাস বাণিজ্যিকভাবে আবাদ করলে শত শত লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং এখানকার পতিত জায়গার সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত হবে।
বাগান তৈরির অনুপ্রেরণার বিষয়ে তিনি বলেন, বাগান করতে আমার স্বামী উৎসাহ দিয়েছে। তার সহযোগিতা ছাড়া এ বাগান তৈরি অসম্ভব ছিল।
ফুলের বাগান দেখতে আসা হবিগঞ্জ শহরের বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুলের অধ্যক্ষ সৈয়দ রওশন সুলতানা বলেন, সত্যিই অসাধারণ। মননশীল মানুষ ছাড়া এধরনের কাজ কেউ করতে পারে না। জেলায় এত সুন্দর বাগান আমরা আর দেখতে পাইনি। রমেনা আক্তার আমার প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে বাগান করার জন্য বীজ ও চারা দিয়ে সহযোগিতা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।
ফয়জাবাদ চা বাগানের ব্যবস্থাপক সৈয়দ গোলাম সাকলাইন বলেন, এই ফুল বাগানের সম্পূর্ণ কৃতিত্ব রমেনা আক্তারের। আমাদেরকে সারাদিন চা বাগান নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। রমেনা আক্তার সাংসারিক কাজের বাহিরে এই বাগান করতে প্রচুর সময় ব্যয় করেন। কিন্তু সবাই যখন আমাদের বাগান দেখে আনন্দ পায় তখন আমাদেরও খুব ভাল লাগে।