ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১৬:৩২:১৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি ছাড়াবে আগামী সপ্তাহে থাইল্যান্ডের গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী চলতি মাসে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু থাইল্যান্ডের রাজা-রাণীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

দেশ পালানো ফুটবলার নাদিয়া এখন বিশ্ব তারকা

খেলাধুলা ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৪৯ এএম, ২০ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

পাঁচ বছরের কঠিন শ্রমের ফল মিলেছে হাতেনাতে! মেডিকেল পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উতরে গেছেন। তবে চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছে মেটানোর আগে নিজের আরও কয়েকটি স্বপ্নপূরণ করে ফেলেছেন নাদিয়া নাদিম!

তালিবানি রক্তচক্ষুর ভয়ে এককালে দেশ পালানো মেয়েটিই এখন ফুটবল মাঠে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। এককালে ভুয়ো পাসপোর্টে আফগানিস্তান ছাড়া উদ্বাস্তু মেয়েটিকেই সে দেশের সবচেয়ে প্রভাবশালী ফুটবলার বলে মেনে নিয়েছেন অনেকে। অনেকে তো আবার ৩৪ বছরের নাদিয়াকে সর্বকালের সেরা আফগান নারী ফুটবলারের তকমাও দিয়েছেন।

ক্লাব বা আন্তর্জাতিকস্তরে ফুটবল নিয়ে দৌড়ে বেড়ানোর পাশাপাশি ডাক্তারি পরীক্ষার পড়াশোনাও সমান তালে চালিয়েছেন নাদিয়া। তাতে পাশ করার পর টুইট করে ধন্যবাদ দিয়েছেন অগণিত শুভানুধ্যায়ীকে।

নাদিয়া লিখেছেন, ‘প্রথম দিন থেকে আমার পাশে থাকার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। চলার পথে যে সমস্ত নতুন বন্ধুকে পেয়েছি, তাদের সাহায্য ছাড়া এ সব সম্ভব হত না। আমার উপর ভরসা করার জন্য আপনাদের কাছে চিরজীবন কৃতজ্ঞ থাকব!’

বিপক্ষের কড়া রক্ষণকে ফালাফালা করে গোলরক্ষককে বোকা বানানোর মতোই এককালে তালিবানদের বোকা বানিয়েছিলেন নাদিয়া। তখন তার বয়স মাত্র ১১! ওই বয়সেই কাবুলের দক্ষিণে হেরাট শহরে তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন নাদিয়ারা।

২০০০ সালের কথা। ১১ বছরের নাদিয়া এক দিন খবর পেলেন, তার বাবা রাব্বানি নাদিমকে তালিবান জঙ্গিরা তুলে নিয়ে গেছে। সে সময় রাব্বানি ছিলেন আফগান সেনার জেনারেল। সে দিনের পর বাবাকে আর দেখতে পাননি তারা। শুনেছিলেন, কোনও এক মরুভূমিতে বাবাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিয়েছে তালিবান। সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের নিয়ে ভিটে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন নাদিয়ার মা হামিদা। এর পর তালিবান জঙ্গিদের বোকা বানিয়ে ভুয়ো পাসপোর্টে দেশ ছেড়েছিলেন নাদিয়ারা। সঙ্গে মা এবং চার বোন।

ভিটেমাটি-সহ নিজেদের প্রায় সব কিছু বেচে ভুয়ো পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তান পৌঁছন নাদিয়ারা। সেখান থেকে ট্রাকে করে ইটালি। তার পর লন্ডন। শেষমেশ পা রাখেন ডেনমার্কে। 

ছোটবেলার কথা বলতে গিয়ে মিডিয়াকে নাদিয়া বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের জীবনে যুদ্ধও ছিল, যাতে বাবা খুন হয়েছিল। ওই স্মৃতিগুলো সুখের নয়। বেশ অশান্তির আর বেশির ভাগই ভয়ের। আফগানিস্তানে আমাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত ছিল না।’

ডেনমার্কের গ্রামে এসে একটি শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই হয়েছিল নাদিয়াদের। শিবিরের মাঠে ফুটবলের অনুশীলন করত ছোট ছোট মেয়েরা। আর কাঁটাতারের পাশে দাঁড়িয়ে তা-ই দেখতেন ছোট্ট নাদিয়া। সে সময় থেকেই ফুটবলের নেশা ধরে যায় তার।

ফুটবলার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর নাদিয়ার সে সময় মনে হয়েছিল, ‘মেয়েদের খেলতে দেখে ভেবেছিলাম, আমাকেও এ মাঠে নামতে হবে। মনে হয়েছিল, আমি ফুটবলারই হতে চাই।’

একদিন শিবিরের ফুটবল কোচের কাছে নিজের ইচ্ছের কথাটা পেড়ে বসেন নাদিয়া। কয়েক মাস অনুশীলনের পর তার অভিষেক হয় ফুটবল মাঠে। 

নাদিয়ার কথায়, ‘হঠাৎই আমার প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ খেলছি, ড্রিল করছি, চার পাশে কী ঘটছে তা বুঝতেই সময় লেগে গিয়েছিল। তবে বেশ লাগছিল!’

এক সময় শরণার্থী নাদিয়াকে ডেনমার্ক সরকার আশ্রয় দেয়। এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। ২০০৫ সালে পেশাদার হিসেবে ডেনমার্কের প্রথম শ্রেণির ক্লাব বি৫২ আলবর্গ দলের জার্সি পরেন। সে বছরের শেষে টিম ভাইবর্গে যোগ দেন। এর পরে প্রায় ১০ বছর সে দেশের একাধিক ক্লাবে খেলেছেন নাদিয়া। সব ক্ষেত্রেই তিনি দলের ভরসাযোগ্য স্ট্রাইকার।

এর পরের ঘটনা আরও সাড়া জাগানো। ২০০৯ সালে ডেনমার্কের জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নামেন নাদিয়া। বস্তুত, নাদিয়াই ডেনমার্কের প্রথম ফুটবলার যিনি জন্মসূত্রে ডেনিশ নন। অন্য দেশকে আপন করে নিয়েছেন নাদিয়া। ডেনমার্কের হয়ে ৯৯টি ম্যাচে করেছেন ৩৮টি গোল।

২০১৪ সালে নাদিয়া চলে যান আমেরিকায়। স্কাই ব্লু এফসি ক্লাবের হয়ে খেলতে। এর পরের বছর লোনে তাকে নিয়ে নেয় পোর্টল্যান্ড থর্নস।

২০১৮ সালে আসে তার ক্লাব ফুটবল কেরিয়ারের সোনালি অধ্যায়। সে বছর উইমেন্স সুপার লিগে ম্যানচেস্টার সিটি-র জার্সি পরেন নাদিয়া।

ম্যান সিটি-তে বছরখানেক কাটিয়ে ২০১৯ সালে প্যারিস সঁ জঁ-তে যোগ দেন নাদিয়া। ভাইস-ক্যাপ্টেনও হন। সঁ জঁ-তে থাকাকালীন প্রথম বার ওই ক্লাবের ইতিহাসে লিগ খেতাব জিতে নেয় তার দল

সে মৌসুমে ২৭টি ম্যাচে ১৮ গোল এসেছিল নাদিয়ার পা থেকে। গত বছরের জুনে অবশ্য আমেরিকার লিগ ফুটবলে রেসিং লুইভিল ক্লাবে চলে গিয়েছেন তিনি।

পায়ের নিপুণ কাজে তেকাঠিতে বল ঠেলতে দক্ষ নাদিয়া খেলার মাঝে মগ্ন ছিলেন মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতিতে। দুইয়ের মাঝে ফাঁক খুঁজে নাদিয়া হামেশাই সরব হয়েছেন আফগানিস্তানের নারী এবং শিশুকন্যাদের অধিকার রক্ষার দাবিতে।

আফগানিস্তানের নারী এবং শিশুকন্যাদের অধিকার রক্ষার লড়াইতে গত বছর জাতিসংঘসহ নানা স্থানীয় সংগঠনের হয়ে ২৯ হাজার পাউন্ড তোলায় সাহায্য করেন নাদিয়া। তালিবানি শাসনে নিজ দেশের মেয়েরা যে ভয়ের পরিবেশে বাস করছেন, তা নিয়েও মুখ খুলেছেন এই আন্তর্জাতিক তারকা।