নারীর অর্থনৈতিক স্বীকৃতি
বীরেন মুখার্জী | উইমেননিউজ২৪.কমপ্রকাশিত : ০২:০৪ পিএম, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার
নারী ও পুরুষের সমঅধিকারের প্রসঙ্গটি বিবেচনায় নিয়ে সাম্যের কথা বলেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/ অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ অথচ একুশ শতকে দাঁড়িয়ে, আমাদের দেশে নারী-পুরুষের সমতা অধরা, বহুল আলোচিত একটি বিষয়।
নারীরা কেন সমাজে কর্ম ও ত্যাগ যথাযথ স্বীকৃতি পাবে না, এমন কথা প্রায়ই আলোচনার টেবিলে উঠে আসছে। জাতীয় অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় নারীর অবদানের স্বীকৃতির বিষয়টি নারী উন্নয়ন নীতিতেও অন্তর্ভুক্ত। ফলে নারীরা কেন রাষ্ট্রীয় বৈষম্যের শিকার হবেন- তা অবশ্যই প্রশ্নের উদ্রেক করে। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নারীর অবদান যেহেতু স্বীকার করা হচ্ছে, তাহলে কেন তাদের ছোট করে দেখা হবে- বোধকরি এ প্রশ্নটি সকল মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই।
সম্প্রতি একটি জরিপে দেখা গেছে, গ্রামীণ কৃষি এবং বিভিন্ন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে দেশের ৫৩ শতাংশ নারী। কৃষি উৎপাদনে ২৩ ধরনের কাজের মধ্যে ২০টিতেই নারীর অবদান সবেচেয়ে বেশি বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। ফসল উৎপাদনে মাঠের কাজ থেকে শুরু করে মাঠের বাইরেও উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণের কাজে নারীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। অথচ এটা অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই যে, এদেশে এখনও নারীদের সমস্যা বহুবিধ। পরিবার, সমাজ, বাইরের কর্মজগৎ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অধিকার আদায়ে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করতে হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয়, ধর্মান্ধতা এবং অশিক্ষার কারণেও নারী তার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি চাকরির ক্ষেত্রে নারীর মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে বৈষম্য আমরা দেখছি। এছাড়া যৌতুক, বাল্যবিবাহ, একাধিক কন্যাসন্তানের জন্মদান নিয়ে স্ত্রী তালাক, পারিবারিক সহিংসতা, এসিড নিক্ষেপ বা হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার ঘটনা ক্রমেই বাড়ছে। যা অত্যন্ত পরিতাপের এবং দেশের সমৃদ্ধির অন্তরায় হিসেবেই আমি মনে করি।
দেখা গেছে, একজন নারী গ্রামীণ অর্থনীতিতে নানাভাবেই অবদান রাখছে। এ অবদানের পরিধিও বিস্তৃত। এ সত্ত্বেও গ্রামীণ নারীদের কাজের নেই কোনো সামাজিক কিংবা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারীর অবদানকে নিছক পারিবারিক ও অবৈতনিক শ্রম হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। কিন্তু নারীর সত্যিকার উন্নয়ন করতে হলে রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। নারীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে।
দেশের সামষ্টিক উন্নয়নে নারী ও পুরুষ উভয়েরই অবদান রয়েছে। তাই এদের প্রত্যেকেরই মূল্যায়ন হওয়া জরুরি। নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই একটি দেশ উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখর স্পর্শ করতে পারে। ফলে সমতার বিষয়টিও যৌক্তিকভাবেই বিবেচনায় নেওয়া দরকার। আমরা বলছি না, সরকার তথা দেশের নীতিনির্ধারণী মহলের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেই। কিন্তু বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ও নারী মৈত্রী’র যৌথ গবেষণায় উঠে আসা ‘নারীদের অর্থনৈতিক স্বীকৃতি নেই’ এ বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। কেননা, নারীদের কাজের যথাযথ স্বীকৃতি মিললে নারীরা উৎপাদনের প্রতি আরো মনোযোগী হবেন। আর এতে শুধু উৎপাদনই বাড়বে না, সঙ্গে সঙ্গে জিডিপিতে কৃষির অবদানও বাড়বে।
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ একটি রাষ্ট্র। যার মূল জোগানই আসে কৃষি খাত থেকে। আবার দেশের কৃষি খাতেও লেগেছে উন্নতির ছোঁয়া। বেড়েছে মাছ, মাংস ও সবজির উৎপাদন। আর কৃষির এ উন্নয়নে যে গ্রামীণ নারীরাই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে, তা বলাই বাহুল্য। তথ্যমতে, দেশের প্রায় আড়াই কোটি কৃষিশ্রমিকের মধ্যে এক কোটির বেশিই নারী। গ্রামের নারীরা নিজের জমি ছাড়াও অন্যের জমিতে কাজ করছেন। এতে গ্রামীণ নারীরা স্বাবলম্বীও হচ্ছেন। পরিবারের অর্থনীতিতে অবদান রাখায় তারা বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। কৃষিতে নারীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ গ্রামীণ নারীদের ক্ষমতায়নেও ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এসব সত্ত্বেও যদি গ্রামীণ নারী তাদের কাজের যথাযথ মজুরি না পায়, তাহলে লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজ গঠন কল্পনাবিলাস ছাড়া আর কিছুই হতে পারে না।
কৃষি এ দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। সেখানে যখন পুরুষের চেয়েও নারী এগিয়ে এসেছেন তখন তা অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। সব কিছুতে নারী নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। বন্ধুর পথ চলতে চলতে নারী নিজেকে যোগ্য করে তুলেছেন। আধুনিক সভ্যতার যুগে নিজেদের যোগ্যতা, কর্মদক্ষতা ও নেতৃত্বগুণে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতৃত্বের পদগুলোতে আসীন হচ্ছেন নারী। সুতরাং এখন সময় এসেছে, সমাজ-রাষ্ট্র থেকে নারী-পুরুষের মধ্যকার সব ধরনের বৈষম্য বিলোপের পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরে নারী নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা জরুরি।
আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যার অর্ধেক নারী হলেও দেশের আর্থ-সামাজিক পরিবেশ নারীর প্রতিকূলে থাকলে, সে দায় আমরা কেউই এড়াতে পারি না। প্রতিনিয়ত খবরের কাগজ উল্টালেই আমাদের দেখতে হবে নারীর ওপর হিংস্র আক্রমণ, যৌন পীড়ন, শারীরিক-মানসিক লাঞ্ছনা। নারী ঘরে-বাইরে-কর্মক্ষেত্রে-শিক্ষাক্ষেত্রে অর্থাৎ প্রায় সর্বত্রই চরম নিরাপত্তাহীনতার শিকার। যুবতী, কিশোরী, বালিকা, কন্যাশিশু, পূর্ণবয়স্ক কেউই রেহাই পায় না পাশবিকতা থেকে। নারীর ওপর হিংস্র আক্রমণের ইতিহাস প্রাচীন হলেও বর্তমান সভ্য, আধুনিক, অগ্রগামী সমাজে এমনটি মেনে নেওয়া সত্যিই দুরূহ।
জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে নারী উন্নয়ন। বর্তমান সরকার নারীর সার্বিক অধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের মূল ধারায় সম্পৃক্তকরণের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। অতীতে আমাদের সমাজে নারীশিক্ষার বিষয়টি ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু নারী উন্নয়নে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে আমাদের দেশে নারী শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ প্রশাসনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ দেশের সামগ্রিক উন্নয়নকেই চিহ্নিত করে।
দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী নারী। বাংলাদেশের জন্য এটি একটি বড় অর্জন। কোনো সন্দেহ নেই, গত ২০ বছরে দেশের নারীরা অনেক সামনে এসেছেন। আমাদের দেশের নারীরা সর্বক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছেন। তাই বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় নারীর ক্ষমতায়ন এবং অধিকারের প্রশ্নে আমাদের অর্জনকে একেবারে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। তাহলে নারীর প্রতি এ অবিচার কীসের স্বার্থে?
এ কথা তো সত্য যে, পরিবার ও সমাজে কন্যা-জায়া-জননী হিসেবে নারীর ভূমিকা বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। একই সঙ্গে নারীর মানবিক মর্যাদা ও ভূমিকা অনস্বীকার্য। আসলে একটি আধুনিক সমাজে নারী-পুরুষের আলাদা আলাদা ভূমিকার কথা চিন্তাও করা যায় না। নারী-পুরুষ কেউ কারও প্রতিপক্ষ তো নয়ই, বরং একে অপরের পরিপূরক। সমকালিন বিশ্বে নারী নেতৃত্ব অনেকটাই সুপ্রতিষ্ঠিত। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ কথা আরও সত্যি।
সুতরাং নারীকে অর্থনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রের বাধাটাই অপসারণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। আবার পুরুষশাসিত এ সমাজে নারীর কল্যাণ নিশ্চিত করতে সবার আগে পুরুষদের এগিয়ে আসতে হবে। দূর করতে হবে বিদ্যমান বৈষম্য। কেননা, সাম্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া আমাদের সামাজিক উন্নয়ন-অগ্রগতির পথ মসৃণ করা সম্ভব নয়। নারীর সার্বিক অবদানের স্বীকৃতি সামগ্রিকভাবে জাতির বিকাশের পথকেই প্রশস্ত করবে। আমি মনে করি, প্রচল এ ব্যবস্থার অবসান ঘটিয়ে নারীকে এনে দিতে হবে সেই সম্মান, যা মাথা উঁচু করে নারীরা বলতে পারবেন।
আমরা লিঙ্গবৈষম্যহীন সমাজের প্রত্যাশা করি। এটি বাস্তবায়নের জন্য সরকার যদি এগিয়ে আসে তাহলে নারীর অর্থনৈতিক স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়টি আর অধরা থাকে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেহেতু নারীরা অধিষ্ঠিত, তারা বিষয়টি ভেবে দেখবেন আশা করি।
লেখক : কবি, প্রাবন্ধিক ও সংবাদকর্মী
- বিশ্বকাপ জয় প্রসঙ্গে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য নেইমারের
- ঋণের চাপে গলায় ফাঁস নিলেন গৃহবধূ
- আগের ফর্মে ফেরত আসলাম: মিষ্টি জান্নাত
- ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
- ‘ইন্ডাস্ট্রিতে পারিশ্রমিক নিয়ে বৈষম্য দেখা যায়’
- পুলিশ সদস্যের মেয়ের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
- বর্ণবাদের বিষবাষ্প এবার খাজার দুই মেয়ের দিকে
- ‘সরকারকে অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’
- ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে উগ্রবাদের স্থান হবে না’
- দেশের ২৬তম প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী
- সরকারি হলো ১২ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
- যুক্তরাষ্ট্রে টিকটকের নতুন চুক্তি
- শীতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে কী খাবেন?
- দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা সেবা বন্ধ ঘোষণা
- প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক
- কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের তীব্রতা
- সড়ক দুর্ঘটনায় আহত নোরা ফাতেহি
- গণভোট নিয়ে নানা শঙ্কা
- ‘ভোটের গাড়ি’র প্রচার শুরু আজ
- বরের জুতা লুকানোয় সংঘর্ষ, ভেঙে গেল বিয়ে
- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ
- নারী সাংবাদিকতার সংগ্রাম ও সম্ভাবনার দলিল
- ‘ভিজে যাচ্ছিল পোশাক, ভয়ে কাঁপছিলাম’
- পশ্চিম তীরে নতুন ১৯টি বসতি স্থাপনের অনুমোদন দিল ইসরায়েল
- নিরাপত্তা, অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়ে আবেদন ১৫ রাজনীতিবিদের
- আগামী বাজেটের রূপরেখা দিয়ে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার
- উসকানিমূলক বক্তব্যের ধারাবাহিকতায় হামলা: উদীচী
- ‘বিশ্বসেরা হতে ইয়ামালের বান্ধবী থাকা গুরুত্বপূর্ণ’
- তদন্তে জানা গেল, মেসিকে আনতে কত খরচ করেছে ভারত
- ফেসবুকে লিংক শেয়ারকারীদের জন্য দুঃসংবাদ





