ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ৫:২৩:১৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘সরকারকে অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা সেবা বন্ধ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘না রাখতে’ দেওয়ার হুমকি শুভেন্দুর ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে সোনা

ন্যূনতম ১৬ হাজার টাকা বেতন চান বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শ্রমিকরা

বিবিসি | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৪৭ পিএম, ৯ জানুয়ারি ২০১৮ মঙ্গলবার

বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের নতুন মজুরী নির্ধারণের জন্য একটি নতুন মজুরী বোর্ড গঠন করা হচ্ছে।


এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছিল।


সাম্প্রতিক সময়ে শ্রমিকদের বড় কোন বিক্ষোভ ছাড়াই এবার বেতন বাড়ানোর লক্ষ্যে মজুরী বোর্ড গঠনে সম্মত হয়েছে মালিকপক্ষ।


ন্যূনতম মজুরি হিসেবে এখন শ্রমিকেরা কি দাবী করছে? আর মালিকপক্ষই বা কতটা ছাড় দিতে প্রস্তুত?
অর্থনীতিবিদদের হিসাবে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ঘটেছে ৩০ শতাংশের বেশি। কিন্তু এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি বাড়েনি।


২০১৬ সালে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধির পর পোশাক খাতেও বেতন বৃদ্ধির জন্য বড় রকমের আন্দোলন হয়েছিল। তবে আশুলিয়ায় শুরু হওয়া এবং বেশ কয়েকদিন ধরে চলা সে আন্দোলন শেষ হয়েছিল কোন প্রতিশ্রতি ছাড়াই।


এখন নতুন মজুরী বোর্ড তৈরির খবরে শ্রমিকেরা বলছেন, তাদের ন্যুনতম বেতন বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করতে হবে।


কথা হচ্ছিল ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকার একটি নামী তৈরি পোশাক কারখানার কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে।


"বর্তমানে চালের কেজি ৬০ টাকা, পেয়াজ ১২০ টাকা। ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করাতে পারি না।"


বাংলাদেশে সবশেষ ২০১৩ সালে পোশাক শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করা হয়েছিল।


তিনি বলছেন, "একটা রুম ভাড়া যখন তিন হাজার দিতাম, তখন এই বেতনে পোষাইত। কিন্তু এখন একটা রুম ছয় সাত হাজার টাকা হইছে। আমাদের মালিক বলছে ১৫ শতাংশ বাড়াবে, আমাদের বেতনে এতে কত টাকা বাড়ে?"


"আমরা চাই ন্যুনতম মজুরি দশ হাজার টাকা করতে, আর বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা মিলায়ে সর্বমোট ১৬ হাজার টাকা।"


বাংলাদেশে ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। ১৯৮৫ সালে এ খাতে ন্যুনতম মজুরি ছিল ৫৪২ টাকা।


কয়েক দফা বাড়ানোর পর সর্বশেষ ২০১৩ সালে মজুরি বাড়ানো হয়। তবে প্রতিবার বেতন বৃদ্ধির জন্য ব্যাপক আন্দোলন করতে হয়েছে শ্রমিকদের। এবারই প্রথম কোন আন্দোলন ছাড়াই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য বোর্ড গঠণে সম্মত হয়েছে মালিক পক্ষ।


শ্রমিক সংগঠনগুলো বলছে, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন আলোচনায় মালিকপক্ষ ন্যুনতম মজুরি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছে। তবে, একে খুবই অপ্রতুল বলে বর্ণণা করছিলেন শ্রমিকদের একটি সংগঠন গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার।


"২০১৩ থেকে ২০১৮র মধ্যে সব কিছুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। যেকোন শ্রমিকের জন্য এখন যা বেতন পান তারা, সংসার চালানো কঠিন। মালিকেরা বলছেন ২০ শতাংশ মজুরি বাড়াবেন। আজকে দেখেন জাহাজ ভাঙা শিল্পেও ন্যুনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ১৬ হাজার টাকা।"


তবে, মজুরি বৃদ্ধির জন্য তৈরি পোশাক শ্রমিকেরা আন্দোলন করেনি, এমন বক্তব্যে দ্বিমত পোষণ করলেন মিজ তালুকদার।


এবার কোন আন্দোলন ছাড়াই গার্মেন্টস মালিকরা বেতন বৃদ্ধির জন্য বোর্ড গঠন করতেক রাজি হয়েছেন।


তিনি বলছেন, সাভার, আশুলিয়া ও গাজীপুরে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে নিয়মিত আন্দোলন চালিয়ে আসছে শ্রমিকেরা। তবে, এখন আর আগের মত রাস্তায় অবরোধ বা ভাঙচুর হয়না বলে দাবী করেছেন তিনি।


তৈরি পোশাক রপ্তানীর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। এ খাতে কম্বোডিয়া ও মিয়ানমারসহ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বি দেশগুলোর অনেকেই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, মজুরি নির্ধারণের প্রস্তাব তারাই দিয়েছেন, কিন্তু সেটি প্রদানের ক্ষেত্রে মালিকদের সামর্থ বিবেচনায় নিতে হবে।


"এখানে মজুরি ঠিক করতে হবে কারখানার সক্ষমতা অনুযায়ী। ধরুন আপনি একটা মজুরি ঠিক করলেন দিতে পারলেন না। কারখানা বন্ধ হয়ে গেল, তখন কি হবে? ওয়েজ বোর্ড হলে তারাই ঠিক করবে, কত কি দেয়া যায়। সে অনুযায়ী আমরা মজুরি দেব।"


"কারণ পুরো পৃথিবীতে এখন অ্যাপারেল পন্যের চাহিদা দিনদিন কমে যাচ্ছে, দামও কমে যাচ্ছে। সেখানে টিকে থাকাই মুশকিল। এর ওপর গত দুই বছরে আমাদের আটশো থেকে এক হাজার কারখানা বন্ধ হয়েছে।"


"তাছাড়া কমপ্লায়েন্স নিয়ে এক ধরণের চাপের মধ্যে আমরা আছি। এরকম নানা ইস্যু নিয়ে আমাদের অবকাঠামোগত কিছু দুর্বলতা আমাদের এখনো আছে।"


আগামীকাল রোববার যে নতুন মজুরী বোর্ড তৈরির কথা রয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সেটি নতুন মজুরি কার্যকর করবে, এবং শ্রমিকেরা ডিসেম্বর থেকেই নতুন নির্ধারিত মজুরি অনুযায়ী বেতন পাবেন।

 

বলা হয়ে থাকে, এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে বাংলাদেশেই সর্বনিম্ন মজুরি প্রদান করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে এ খাতে এই মূহুর্তে ৪৪ লাখ মানুষ কাজ করছে।