ঢাকা, শুক্রবার ০৫, ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:১২:৪৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

পৃথিবীর ছাদের নিচে এক বরফ ঢাকা দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০২ পিএম, ২৮ জুলাই ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

পৃথিবীর ছাদ বলা হয় পামির মালভূমিকে। আর পামিরের দক্ষিণ পাদদেশে রয়েছে সাদা বরফ ঢাকা অসংখ্য পর্বত বেষ্টিতে এক দেশ। দেশটি পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর একটি দেশ। বলা হচ্ছে কাবুল, কান্দাহারের দেশ আফগানিস্তানের কথা। এটি পৃথিবীর চল্লিশতম বৃহত্তম দেশ।
যুদ্ধ আর অস্ত্র আফগানিস্তানের মূল সৌন্দর্যের দিকে চোখ ফেরাতে দিচ্ছে না। অথচ বিচিত্র ইতিহাস, চিন্তা, দর্শন এবং  বহু ধর্মের মিথষ্ক্রিয়ার দেশ আফগানিস্তান। আফগানরা জাতি হিসেবে দারুণ অতিথি পরায়ণ। এরা আনন্দপ্রিয় এবং বন্ধুবৎসল। দূর্ভাগ্যজনকভাবে গত চার দশক ধরে চলা যুদ্ধে আফগানিস্তানের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেন চাপা পড়ে আছে!

এই দেশের আছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের অসংখ্য নজির। তুষার ঢাকা মরুভূমি, পূর্ব উপত্যকা জুড়ে আঙুর আর আনারের বাগান। আফগানিস্তান যেমন সুন্দর, তেমন রহস্যঘেরা এক দেশ। এই দেশের মাটি থেকেই অনেক কবি, সুফীর জন্ম হয়েছে। মওলানা জালালউদ্দিন যিনি মওলানা রুমি নামে পরিচিত। রুমি বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে গেছেন এই আফগানিস্তানের মাটি থেকেই। মহাকবি ফেরদৌসি, হাকিম সানাই, হাকিম জামি এবং ঈমাম আবু হানিফা এদের সবার সঙ্গেই কোনো না কোনোভাবে মিশে আছে আফগানিস্তানের আলো বাতাস।

সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’ পড়ে অভিভূত হননি- এমন বাঙালি কি আদৌ আছে! ট্রেনের জানালা দিয়ে দৃষ্টি দিয়ে মুজতবা আলী যখন ছুটে যাচ্ছিলেন কাবুলের পথে তখন মরুভূমির শূন্যতার দিকে তাকিয়ে নিমগ্ন হয়ে অবাক বিষ্ময়ে বলেছিলেন,‘ মরুভূমির নিষ্ফলা জমিকে অগ্রাহ্য করে ফুলের গাছে কেমন নাছোড়বান্দার মতো ফুল ফুটেছে। সত্যিই আফগানিস্তানের কেবল একটি দিক শুধু আমরা দেখি-যুদ্ধ, ধ্বংস আর অস্ত্র। এইসব কিছুকে অগ্রাহ্য করে নাছোড়বান্দা ফুলের মতো কতভাবেই না মাধুর্য ছড়িয়ে যাচ্ছে দেশটিতে। 

আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেক এলাকার উচ্চতা সমুদ্র সমতল থেকে ২০০০ মিটার বা তার চেয়ে উঁচুতে অবস্থিত। ছোট ছোট হিমবাহ ও বছরব্যাপী তুষারক্ষেত্র প্রায়ই দেখা  যায়। উত্তর-পূর্ব সীমান্তে অবস্থিত ৭৪৯২ মি উচ্চতা বিশিষ্ট নওশাক আফগানিস্তানের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ও সর্বোচ্চ বিন্দু। এই দেশের নদী উপত্যকা ও কিছু ভূগর্ভস্থ পানিবিশিষ্ট নিম্নভূমি ছাড়া অন্য কোথাও কৃষিকাজ হয় না বললেই চলে। মাত্র ১২ শতাংশ এলাকা পশু চারণযোগ্য। দেশটির মাত্র এক শতাংশ এলাকা বনাঞ্চল, এবং এগুলি পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আফগানিস্তানে অবস্থিত। আফগানিস্তানের বেশির ভাগ প্রধান নদীর উৎপত্তি পার্বত্য জলধারা থেকে। দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক মৌসুমে বেশির ভাগ নদী শীর্ণ ধারায় প্রবাহিত হয়। 

বসন্তে পর্বতের বরফ গলা শুরু হলে এগুলিতে পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি পায়। বেশির ভাগ নদীই হ্রদ, জলাভূমি কিংবা নোনাভূমিতে গিয়ে মেশে। এদের মধ্যে কাবুল নদী ব্যতিক্রম; এটি পূর্বে প্রবাহিত হয়ে পাকিস্তানের সিন্ধু নদের সাথে মেশে, যা পরে ভারত মহাসাগরে গিয়ে পতিত হয়। দেশটির একমাত্র নৌ-পরিবহনযোগ্য নদীটি হল উত্তর সীমান্তের আমু দরিয়া। তবে ফেরি নৌকার সাহায্যে অন্যান্য নদীর গভীর এলাকায় যাওয়া যায়। 

আফগানিস্তানের হ্রদগুলো সংখ্যায় ও আকারে ছোট। ফ্লেমিংগো ও অন্যান্য জলচর পাখি গজনীর উত্তরে ও দক্ষিণে হ্রদ এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়। হাঁস ও তিতিরজাতীয় পাখিও চোখে পড়ে। তবে পাখি অনেক শিকার করা হয় এবং ফলে কিছু কিছু পাখির অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন, যেমন - সাইবেরীয় বক।

আফগানিস্তানের উদ্ভিদরাজি সংখ্যায় অল্প কিন্তু বিচিত্র। পর্বতে চিরসবুজ বন, ওক, পপলার, হেজেলনাট ঝাড়, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম উৎপাদন করা হয়। উত্তরের সমতলভূমি মূলত শুষ্ক, বৃক্ষহীন ঘাসভূমি, আর দক্ষিণ-পশ্চিমের সমভূমি বসবাসের অযোগ্য মরুভূমি। শুষ্ক অঞ্চলের গাছের মধ্যে আছে ক্যামেল থর্ন, লোকোউইড, মিমোসা, ওয়ার্মউড, সেজব্রাশ ইত্যাদি। 

আফগানিস্তানের বন্য এলাকায় দেখতে পাওয়া যায়, আর্গালি, আইবেক্স বা বুনো ছাগল, ভালুক, নেকড়ে, শেয়াল, হায়েনা ও বেঁজি। এদেশে বরফজমা ভোর থেকে দুপুরে ৩৫° তাপমাত্রা ওঠা বিচিত্র নয়। অক্টোবর ও এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমি এলাকায় বছরে চার ইঞ্চিরও কম বৃষ্টি পড়ে। অন্যদিকে পর্বত এলাকায় বছরে জলপাতের পরিমাণ ৪০ ইঞ্চিরও বেশি, তবে এর বেশির ভাগই তুষারপাত। পশ্চিমের হাওয়া মাঝে মাঝে বিরাট ধূলিঝড়ের সৃষ্টি করে, আর সূর্যের উত্তাপে স্থানীয় ঘূর্ণিবায়ু ওঠাও সাধারণ ঘটনা।

আফগানিস্তানের খুবই সামান্য এলাকায়, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা উপত্যকায় কৃষিকাজ সম্ভব এবং এই কৃষিভূমির সবগুলোতেই ব্যাপক সেচের প্রয়োজন হয়। ঝর্ণা ও নদী থেকে খাল (কারেজ বা গানাত) খুঁড়ে পানি আনা হয়। গম আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শস্য। এরপর রয়েছে যব, ভুট্টা, ও ধান। তুলাও ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। আফগানিস্তানের আঙুর, তরমুজ আর কিশমিশের খ্যাতি কম নয়। অন্যান্য ফলের মধ্যে রয়েছে এপ্রিকট, চেরি, ডুমুর, তুঁত, ও ডালিম।

এই অঞ্চলের ভৌগলির গুরুত্ব প্রাচীনকাল থেকেই। কারণ এর তিন দিকে ছিলো তিনটি বৃহৎ সভ্যতার অবস্থান। পশ্চিমে পারস্য, পূর্বে চীন এবং নিচে ছিলো হিন্দুস্থানের অবস্থান।