ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৮:২৬:৪১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

মধ্যরাত পর্যন্ত শাহবাগে চললো বহু ভাষার লহরী

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৩৮ এএম, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে কেন্দ্র করে পাহাড়, সমতল ও চা বাগানের আদিবাসী শিক্ষার্থী এবং নাগরিকদের যৌথ উদ্যোগে সকল জাতিসত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকারসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে মধ্যরাত পর্যন্ত শাহবাগে চললো বহু ভাষার লহরী।
শনিবার ( ২২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৪টায় শাহবাগে অনুষ্ঠিত হয়েছে বহু ভাষার লহরী কর্মসূচিতে। আলোচনাপর্ব এবং সাংস্কৃতিকপর্ব এই দুই ভাগে  সাজানো হয়েছিলো অনুষ্ঠান । আলোচনা পর্বে বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার এবং চাকমা ভাষার গবেষক পুলক জীবন খিসা, চা বাগান জাতিসত্তার প্রতিনিধি মিখা পিরেগু, সমতল আদিবাসীর প্রতিনিধি সোমা ডুমরি এবং পর্বটি সঞ্চালনা করেছেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের প্রেসিডেন্ট অঙ্কন চাকমা। বহু ভাষার লহরীর সাংস্কৃতিক পর্ব সঞ্চালনা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান ইমু। সাংস্কৃতিকপর্বে নৃত্য পরিবেশন করেছে মুন্ডা নাচ- স্বান্ত্বনা পাহান ও তার দল, ত্রিপুরা নাচের দল তপস্যা এবং মণিপুরী নৃত্যশিল্পী অবন্তী সিনহা। একক ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশনা করেছে বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চম্পাবতী এন মারাক (গারো) এবং সুমনা হেমব্রম (মাহালী ভাষা)। এছাড়াও কর্মসূচিতে সংজোগার( পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠী ভাষার ব্যান্ড), তাগোল (চাকমা ব্যান্ড), তারাশ (সাঁওতাল ব্যান্ড), হুল (সাঁওতাল ব্যান্ড), রে রে (গারো ব্যান্ড) এবং সমগীত সংগীত পরিবেশনা করেছেন। পাশাপাশি প্রদর্শিত হয়েছে বহু ভাষার লড়াইয়ের ইতিহাস।

 অধ্যাপক মানস চৌধুরী বলেন, “আজকে একজন নবীনের সাথে দেখা হয়েছে যিনি ম্রো, তিনি আমাকে বললেন তাদের দুইটি ঔপনেবেশিক ভাষার চাপ সামলে বড় হতে হয়। বলাই বাহুল্য একটি ইংরেজি ভাষা এবং অন্যটি বাংলা। এইটি বাংলাদেশের অন্যান্য জাতিসত্তার ভাষাভাষীদের ক্ষেত্রেও সত্য। বাংলাদেশের আদিবাসীদের দ্বিভাষী হওয়াটা বাধ্যতামূলক। তাদের নিজেদের ভাষা শেখার পাশাপাশি আবশ্যিকভাবে তাদের বাংলা ভাষাটাও শিখতে হয়। এমনকি শুধু শেখা বা জানা না, একজন আদিবাসীকে পরীক্ষা দিতে হয় তিনি কিভাবে বাংলা বলছেন, সঠিক উচ্চারণে বাংলা বলছেন কিনা”। 
তিনি আরও বলেন, ‘পাহাড় ও সমতলে প্রতিটি কর্মসুচি শুরুতে দেশাত্মবোধক গান গাওয়ার মাধ্যমে আদিবাসীদের প্রমাণ দিতে হয় যে তারা দেশের সহী নাগরিক। পাহাড়ে এবং সমতলের জাতিসত্তার কেউই কখনও এই রাষ্ট্রে কেন্দ্রীয় প্রশাসনে ছিলেন না। বহু বছর আগে এখানে সার্বভৌম সাঁওতাল পরগণা অঞ্চল ছিল, সার্বভৌম মণিপুরি রাজ্য ছিল, সার্বভৌম মুন্ডা পরগণা ছিলো। একবার কলকাতায় একজন মুন্ডারি দাঁড়িয়ে বলেছিলেন আমাদের যখন সার্বভৌম রাজত্ব ছিলও, তখন কোন বাঙ্গালির উদ্ভব হয়নি”। 
তিনি বাংলাদেশে সেনাশাসন, কর্পোরেট কোম্পানি  এবং আমলাতন্ত্র যেভাবে পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের জীবনকে যেভাবে অস্তিত্ব এর ঝুঁকিতে ফেলেছে তা বর্ণনা করেন জানান যে, যখন একটি জাতির জীবন অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে তখনই তার ভাষা চর্চা কঠিন হয়ে পড়ে।

চাকমা ভাষার গবেষক পুলক জীবন খিসা বলেন, ‘আমি চাকমা ভাষায় কথা বলতে কখনই দ্বিধাবোধ করিনা। আমি মনে করি প্রতিটি জাতিসত্তার সাংবিধানিক স্বীকৃতি পেতে হবে এবং প্রতিটি জাতিসত্তাকেই তার মাতৃভাষায় স্বচ্ছন্দে কথা বলার সাহস অর্জন করতে হবে, চর্চা করতে হবে’।

সমতলের প্রতিনিধি ও বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সংগঠক সোমা ডুমরি জানান, ‘আদিবাসী জনগোষ্ঠী কেবল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনেই যুক্ত ছিলোনা, তারা যুক্ত ছিল ৭১ এ এবং সম্প্রতি বৈষম্যবিরোধী জুলাই আন্দোলনেও। কিন্তু পরবর্তীতে তাদেরকে ন্যারেটিভ থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।‘ তিনি আরও জানান, ‘ আমার মাতৃভাষা মাহালি এবং আমি মাহালি ভাষায় কথা বলি। আদিবাসীরা যখন তাদের নিজ মাতৃভাষায় কথা বলে তাদেরকে বিভিন্ন রকম অপমান এবং হয়রানির মধ্য দিয়ে যেতে হয়। অথচ ভাষা কেবল যোগাযোগ না, ভাষা হচ্ছে নিজের অনুভূতিকে প্রকাশের মাধ্যম”।

চা বাগান জাতিসত্তার প্রতিনিধি মিখা পিরেগু বলেন, ‘ চা বাগানে ৯০টির অধিক জাতিসত্তার ভাষা রয়েছে। অথচ তা নিয়ে গবেষণা এবং সংরক্ষণের ভুমিকার ক্ষেত্রে কখনোই রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ নেওয়া হয় না”।

 শাহবাগে বিভিন্ন জাতিসত্তার নিজ মাতৃভাষায় পরিবেশিত গানে, নৃত্যে এবং কবিতায় মধ্যরাত পর্যন্ত বহু ভাষার লহরী কর্মসুচিটি অনুষ্ঠিত হয়েছে।