ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ৩:৫৪:৪৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

মুজিববর্ষ উপলক্ষে নান্দনিক পাঠ্যবই: মান নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৩৭ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০২০ বুধবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

মুজিববর্ষ উপলক্ষে আগামী শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকে নান্দনিকতা এনেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। বইয়ের অঙ্গসজ্জায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবন, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবয়ব এবং আদর্শিক আঙ্গিকতা। সেই সঙ্গে স্বাধীনতা-পরবর্তী গণতান্ত্রিক আন্দোলন, আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি, খেলাধুলায় সাফল্য, স্বাস্থ্য সচেতনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ের ছবিসহ ক্যাপশনসহ প্রকাশ পাবে।

অপরদিকে বইয়ের মান ঠিক রাখতে কঠোর মনিটরিং করছে এনসিটিবি। মান ঠিক রাখতে প্রথমবারের মতো ২৪ ঘণ্টা প্রেসে অবস্থান করছেন পরিদর্শন এজেন্সির লোকজন। বই ছাপার কাগজের ছাড়পত্র থেকে উপজেলায় পৌঁছানো পর্যন্ত চার স্তরের মনিটরিং টিম কাজ করছে। কাগজের ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর-বিএফ’ (স্থায়িত্ব), উজ্জ্বলতা-পুরত্বে জিএসএম কম থাকায় এরই মধ্যে এক হাজার টনের বেশি কাগজ ও আর্টপেপার বাতিল করা হয়েছে। বইয়ের মান ঠিক রাখতে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় অনেক মুদ্রণকারী প্রেস নিম্নমানের কাগজ সরিয়ে ফেলেছে। ক্ষমতার প্রভাবে হুমকিও দিচ্ছেন কেউ কেউ। তবে এনসিটিবি ছাড় দিচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এনসিটিবি সূত্র জানায়, গত ৬ থেকে ১৬ অক্টোবর পর্যন্ত মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার ৭৬০ টন কাগজ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে লেটার অ্যান্ড কালার প্রিন্টার্সের ৩০০ টন, মোল্লা প্রিন্টার্সের ১৮০ টন, বর্ণ ও শোভা প্রিন্টার্সের ১২৬ টন। এনসিটিবি ও পরিদর্শন প্রতিষ্ঠানের কঠোর মনিটরিংয়ের খবর পেয়ে অন্য প্রেসগুলো নিম্নমানের কাগজ সরিয়ে ফেলেছে।

শিড মেশিনে বই ছাপাতে এনসিটিবি কাগজ কিনে সরবরাহ করে। এবার ১৩ হাজার টন কাগজ কিনবে। মেঘনা পেপার মিল ৩০০ টন কাগজ সরবারহ করতে স্যাম্পল জমা দিলে মান ঠিক না থাকায় এনসিটিবি তা বাতিল করেছে। গত রবিবার বসুন্ধরা গ্রুপের ২০০ টন আর্টপেপারের স্যাম্পলও বাতিল করেছে।

সূত্র জানায়, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক স্তরে ১০ কোটি ২৫ লাখ ৫৩৪টি, মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৩৩ লাখ ৩৪ হাজার কপি বই ছাপানো হবে। প্রাথমিকের ৯৮টি লট আর মাধ্যমিকে ২১০, ৭৫ এবং ১৭৫ লটে ভাগ করে কাজ দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিকে ৫৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে। তার মধ্যে ১০টি বড় প্রতিষ্ঠান বেশিরভাগ কাজ পেয়েছে। গত ৬ অক্টোবর মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এনসিটিবি চুক্তি করে কার্যাদেশ দিয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ৯৮ দিনের মধ্যে প্রাথমিকের ও ৬০ দিনের মধ্যে মাধ্যমিকের বই ছাপিয়ে মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে দিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পহেলা জানুয়ারির পরে বই সরবরাহের সুযোগ পাবে। বর্তমান সরকারের বিরাট সাফল্য বছরের প্রথম দিন বই উৎসবে বিঘ্নিত হতে পারে।

প্রাথমিকের বইয়ের মান নিয়ন্ত্রণে ব্যুরো ভার্টিটাস বাংলাদেশ (প্রাইভেট) লিমিটেড ও মাধ্যমিকে ইন্ডিপেনডেন্ট ইনেসপেকশন সার্ভিস বিডি নামের প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। আর কাগজের মান যাচাই করতে কন্টিনেন্টাল ইনেসপেকশন বিডিকে নিয়োগ করা হয়েছে। বই ছাপার কার্যাদেশ দেওয়ার প্রথম ১৫ দিনে ২০টি প্রেসে নিম্নমানের প্রায় এক হাজার টন কাগজ বাতিল করেছে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান।

সূত্র জানায়, গত সপ্তাহ নোয়াখালীতে অবস্থিত একটি প্রেসে নিম্নমানের কাগজ বাতিল করায় পরিদর্শন এজেন্সির কর্মকর্তাদের হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত ডিজিকে জানানো হয়। ডিজি নোয়াখালীর জেলা প্রশাসককে (ডিসি) জানান। এরপর ডিসি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওই প্রেসে নজরধারী বাড়ানো ও পরিদর্শক টিমকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ঘটনার পরে এনসিটিবিও নড়ে-চড়ে বসেছে। মুজিববর্ষে বইয়ের মানে ছাড় না দিতে মনিটরিং জোরদার করেছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম দরে বই ছাপার কাজ নিয়েছে। তারা বুঝে-শুনেই দরপত্র জমা দিয়েছে। বইয়ের মানে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। মান যাচাইয়ে নিয়োগকৃত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও এনসিটিবির নিজস্ব টিম সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে। টিমের সদস্যরা প্রতিদিন রিপোর্ট দিচ্ছেন। তার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কাগজের মান যাচাই করতে আলাদা একটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

বই উৎসবের বিষয়ে তিনি বলেন, চুক্তি অনুযায়ী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সামান্য কিছু বই ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত সরবরাহের সময় পাবেন। তাদের অনুরোধ করেছি ডিসেম্বরের মধ্যেই শতভাগ বই সরবরাহ করতে। তারা সরবরাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আর সরবরাহ না করলেও বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে বছরের প্রথম দিন পাঠ্যপুস্তক উৎসব হলেও তাতে সমস্যা হবে না। কারণ, পাঁচ শতংশ বই বাফার গুদামে সংগ্রহ করা হয়।

জানা গেছে, বইয়ের মান যাচই করতে তদারকির চার স্তরের প্রথম স্তরে কাগজের মান নিশ্চিত করা হয়। পরিদর্শন এজেন্সি প্রেস থেকে কাগজের তিন কপি নমুনা সংগ্রহ করে এক কপি প্রিন্টার্স, এক কপি এনসিটিবি এবং অন্য কপি ল্যাবে পরীক্ষা করে। কাগজের মান ভালো হলে বই ছাপার ছাড়পত্র দেওয়া হয়। নিম্নমানের হলে প্রেস থেকে সেই কাগজ সরিয়ে ফেলা হয়। মান উত্তীর্ণ কাগজে বই ছাপা পর্যন্ত প্রতিটি রোল তদারকি করতে একজন কর্মকর্তা ২৪ ঘণ্টা প্রেসে অবস্থান করছেন। ছাপার পর সরবরাহ পর্যন্ত তা মনিটরিং করা হয়। এখানেই শেষ নয়; বই উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছানোর পর সেখান থেকে নমুনা বই সংগ্রহ করে আগের বইয়ের সঙ্গে মান মেলানো হয়। এভাবেই কঠোর তদারকি চলছে এবারের পাঠ্যবই ছাপার কাজ। এসব স্তরে আগে নানা ফাঁকফোকর ছিল।

এনসিটিবির তথ্যমতে, বইয়ের স্থায়িত্ব ও উজ্জ্বলতা দরপত্র অনুযায়ী ঠিক রাখতে এবার মনিটরিং পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে চলতি বছর নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার সুযোগ নেই বলে কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। ৫২টি প্রেসে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করতে ৫২ জন দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে প্রেসে নিম্নমানের কাগজ-আর্টপেপারে বই ছাপার সুযোগ নেই। মনিটরিং কর্মকর্তারা ছাপা হওয়ার পর মান যাচাই করে সরবরাহের অনুমতি দিচ্ছেন। উপজেলায় বই পৌঁছানোর পর সেখান থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে আবার পরীক্ষা করছেন।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে কোনো পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান প্রেসে সার্বক্ষণিক লোক রেখে মান যাচাই করার কাজ করেনি। ফলে রাতের অন্ধকারে ছাড়পত্র পাওয়া কাগজের বদলে নিম্নমানের কাগজে বই ছাপাতো। এবার রাতের অন্ধকারে নিম্নমানের বই ছাপা বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছে ‘ইনডিপেনডেন্ট’।

বই ছাপার টেকনিক্যাল ইন্সপেকশন অ্যান্ড একসেপটেন্স কমিটির (টিইএসি) সদস্য সচিব ও এনসিটিবির গবেষণা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসাইন বলেন, নিয়োগকৃত পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আমরা প্রেসে কাগজ প্রবেশের পরে স্যাম্পল সংগ্রহ করি। কাগজের উজ্জ্বলতা, স্থায়িত্বসহ কাগজের যেসব প্যারামিটার থাকার কথা সেগুলো যাচাই করতে ল্যাবরেটরিতে পাঠাই। এনসিটিবির আত্মতৃপ্তির জন্যই আমরা এ কাজটি করছি।

মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের দাবি, করোনার কারণে কাগজের দাম টনপ্রতি ৪৫ হাজার টাকা কমলেও গত মাস থেকে হঠাৎ করে বেড়ে গেছে। পেপার মিলগুলো প্রতি টন কাগজ ৬০ হাজার টাকার কমে দিচ্ছে না। অথচ বাজারে ৪৫-৪৬ হাজারে পাওয়া যায়। গত বছর যে মানের কাগজে বই ছাপানো হয়েছিল এবার একই মানের কাগজ গণহারে বাতিল করা হচ্ছে।

তবে এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, গত বছর নানা ফাঁকফোকর দিয়ে ছাড়পত্র নিলেও এবার পরিদর্শন এজেন্সি তা আটকে দিচ্ছে। কাগজের বিএফ ১৬, পুরত্ব ৮০ শতাংশ জিএসএম ও উজ্জ্বলতা ৮৫ শতাংশের ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না।

এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন ভাণ্ডার কর্মকর্তা আবু হেনা মাশুকুর রহমান বলেন, বিগত কয়েক বছর কাগজের বিএফ-১৪ ছিল। যে কারণে বই ছাপার কয়েক মাসের মধ্যে কাগজের রং লালচে হয়ে যেত। বিষয়টি ধরা পড়ার পরে কাগজের বিএফ বাড়ানোর প্রস্তাব করি। মুদ্রণ ব্যবসায়ী, শিক্ষা ও প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) এবং বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একদিনের কর্মশালা করে বিএফ-১৬ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, বিএফ-১৬ মানের কাগজ কিনতে টন প্রতি আড়াইশ টাকা খরচ হবে। এই টাকার জন্য মুদ্রাকররা নিম্নমানের কাগজ সরবরাহ করায় বাতিল করা হচ্ছে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে পাঠ্যপুস্তকের কভার পাতার দ্বিতীয় ও তৃতীয় পাতায় প্রথমবারের মতো ভিন্নতা এনেছে এনসিটিবি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্মময় জীবন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে আওয়ামী লীগ সরকারের মেগা উন্নয়ন প্রকল্প (পদ্মা সেতু, পায়রা সমুদ্র বন্দর, রূপপুর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল ইত্যাদি), করোনসহ দুরারোগ্য রোগ থেকে রক্ষায় স্বাস্থ্যসচেতনা, পুষ্টি, অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয়সহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের বিভিন্ন অর্জনের ছবি ক্যাপশনসহ চার রঙে ছাপানো হবে। দরপত্র আহ্বানের পরে এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে বই ছাপার খরচ বাড়বে।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আমাদের ইতিহাস, অগ্রগতি, অর্জনের বিষয়গুলো জানতে পারবে। স্বাস্থ্যসচেতন হতে পারবে। প্রতিটি ছবি ও ক্যাপশন শিক্ষা মন্ত্রণালের অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। খরচ বাড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, কস্টিং করে মুদ্রাকরদের বাড়তি খরচ দেওয়া হবে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই।