ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:৩৫:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
খালেদা জিয়ার অবস্থা এখনও উদ্বেগজনক আরও পেছাল খালেদা জিয়ার লন্ডনযাত্রা খালেদা জিয়ার এন্ডোসকপি সম্পন্ন, থামানো গেছে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ আগারগাঁওয়ে গ্যাসের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণ, নারীসহ দগ্ধ ৬ প্রবাসীদের নিবন্ধন ছাড়াল এক লাখ ৯৩ হাজার

শার্শায় খেজুরের রস সংগ্রহে ব্যস্ত গাছিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০৮ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ রবিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

‘যশোরের যশ খেজুরের রস’ এই প্রবাদে যশোরের বেনাপোলসহ শার্শা উপজেলার প্রতিটি গ্রামের ঘরে ঘরে শুরু হবে গুড়-পাটালি তৈরির উৎসব। এক সময় দিগন্ত জুড়ে মাঠ কিংবা সড়কের দুই পাশে সারি সারি অসংখ্য খেজুর গাছ চোখে পড়তো। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুর গাছ। শীত মৌসুম শুরু সঙ্গে সঙ্গে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর গাছের রস (যা খেজুরের রস নামে পরিচিত) সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন গাছিরা।

বৈচিত্রপূর্ণ ছয় ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। এক একটি ঋতুর রয়েছে এক একটি বৈশিষ্ট্য। তেমনই এক ঋতু হেমন্ত। এই ঋতুতেই দেখা মেলে শীতের। এই শীতের সময়ই পাওয়া যায় সুস্বাদু পানীয় খেজুর গাছের রস। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে এই সুস্বাদু খেজুর গাছের রস পানের মজাই আলাদা। শীতের ভরা মৌসুমে রস সংগ্রহের জন্য শীতের আগমনের শুরু থেকেই রস সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন গাছিরা। এর ফলে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা বেনাপোল-শার্শার গ্রামগঞ্জের খেজুর গাছের কদর বেড়েছে। এখনও তেমন একটা শীতের দেখা না মিললেও এরই মধ্যে খেজুর রস সংগ্রহের কাজ শুরু করে দিয়েছেন অনেকেই। গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী রস পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছে অনেক গাছি।

কয়েক বছর আগেও এলাকার প্রতিটি বাড়িতে, ক্ষেতের আইলের পাশে ও রাস্তার দুই ধার দিয়ে ছিল অসংখ্য খেজুর গাছ। খেজুর গাছ সচারাচর উপযোগী আবহাওয়ায় জন্মে। এমনকি অনেক স্থানে একাধিক গাছ জন্ম নেয়ায় সৃষ্টি হয় দেশি খেজুর গাছের বাগান। খেজুর গাছ সারা বছর অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকে।

প্রতি বছরে ৪ মাস খেজুর গাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করা হয়, যা দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। এ রস অত্যন্ত সুস্বাদু ও মানবদেহের উপকারিতার কারণে মানুষের কাছে অতি জনপ্রিয় হয়ে থাকে। শীতকালে শহর থেকে মানুষ ছুটে আসতো গ্রাম বাংলার খেজুর রস খেতে। রস আহরণকারী গাছিদের প্রাণচাঞ্চল্য লক্ষ্য করা যেত সে সময়ে। রস জ্বালিয়ে পাতলা ঝোলা, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করতেন তারা। যার স্বাদ ও ঘ্রাণ ছিল সম্পূর্ণ রুপে ভিন্ন। এখন অবশ্যই সে কথা নতুন প্রজন্মের কাছে রূপকথা মনে হতে পারে। যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ ৮ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত রস দেয়। এটাই তার বৈশিষ্ট্য।

শীতের পুরো মৌসুমে চলে রস, গুড়, পিঠা, পুলি ও পায়েস খাওয়ার পালা। এছাড়া খেজুর পাতা দিয়ে আর্কষণীয় ও মজবুত পাটি তৈরি হয়। এমনকি জ্বালানি কাজেও ব্যাপক ব্যবহার হয়। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন, কালের বির্বতনসহ বন বিভাগের নজরদারী না থাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পরিবেশবান্ধব খেজুর গাছ এখন বিলুপ্তির পথে।

এ ব্যাপারে বেনাপোলের নারাণপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমি খেজুর গাছের রস সংগ্রহের কাজ করে থাকি। বছরের এই ৪ মাস খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করে থাকি। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি এই রস থেকে পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি।

শার্শার উলাশি গ্রামের ময়িনউদ্দিন বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো বা এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে চাইলে আমাদের সবার উচিৎ তালগাছের মতো বেশি করে খেজুর গাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।

শার্শার কায়বা গ্রামের মান্নান বলেন, দিন দিন খেজুর গাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি বছর শীত মৌসুমে খেজুর গাছের রস, গুড়, পাটালির চাহিদা ঠিকমতোই থাকে। তবে গাছ হ্রাস পাওয়ায় দাম থাকে একটু চড়া। তবু এর স্বাদ নিতে ভুল করেন না সব শ্রেণির মানুষ। প্রথম ধাপে কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাড় ১২০ থেকে ১৫০ টাকা হয়ে থাকে। আর পাটালি প্রতি কেজি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়।

এ ব্যাপারে শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার প্রতাব মন্ডল বলেন, এখনো শার্শায় ৫২ হাজার খেজুর গাছ আছে। তার মধ্যে ৪৬ হাজার খেজুর গাছ রস সংগ্রহের জন্য কাটা হয়। বর্তমানে আমাদের গাছির সংখ্যা মাত্র ৪ শত ৬০ জন, এখনও আমাদের পুরানো ঐতিহ্য আছে কিন্তু গাছির সংখ্যা কম থাকায় খেজুর রস সংগ্রহ করা কম হচ্ছে।

আমরা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে বেনাপোল-শার্শা উপজেলার বিভিন্ন সড়কের দুই ধার দিয়ে খেজুরের গাছ লাগানোর জন্য কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। খেজুর গাছ ফসলের কোন ক্ষতি করে না। এই গাছের জন্য বাড়তি কোন খরচ করতে হয় না। যা সবার রস ও গুড়ের চাহিদা মেটাবে। এ বছর সঠিক সময়ে শীতের আগমণ হওয়াতে বেনাপোল-শার্শা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে আগাম খেজুর গাছ ঝুড়া শুরু হয়েছে। এখান থেকে চাষীরা রস আহরণ করবে। শার্শা উপজেলাতে প্রায় ৫০ হাজার ৫০০টি রস আহরণকারী খেজুর গাছ রয়েছে। সেখান থেকে কৃষকরা খেজুরের রস সংগ্রহ করবে এবং তা থেকে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি পণ্য তৈরি করবে।