ঢাকা, শুক্রবার ২৬, এপ্রিল ২০২৪ ১:২৮:২১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না, এটা বন্ধ হওয়া উচিত: প্রধানমন্ত্রী ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক নিষিদ্ধ করার বিল সিনেটে পাস

সীতাকুণ্ডে ৯০ প্রজাতির আড়াই লাখ গাছের এক অরণ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:০৪ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২২ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

সবুজ বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দেশের অন্যতম শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলির সহযোগী প্রতিষ্ঠান পিএইচপি করপোরেশন। ১৬৬ একর পাহাড়ি বনভূমিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই প্রকল্পকে ‘বিশেষায়িত বনায়ন প্রকল্প’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বন ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা।

হিজল, জারুল, মহুয়া, রক্তচন্দনসহ ৯০ প্রজাতির প্রায় আড়াই লাখ গাছে গড়ে উঠেছে এক সবুজ অরণ্য। যেখানে রয়েছে ৩৭ প্রকারের অর্থকরি কাঠ, ৩০ ধরনের ফলদ, ১৫ প্রকারের বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ এবং ৮ প্রজাতির ঔষধি গাছ। 

২০০৫ সালে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাড়বকুণ্ডে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। কারখানার উত্তর-পূর্ব পাশে ১৬০ একর জায়গায় ওই বছর বনায়ন কার্যক্রম শুরু হয়। কারখানার অভ্যন্তরে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে কারখানাকে সবুজায়ন করা হয়েছে। পরিবেশ রক্ষার অঙ্গীকারে পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস পিএইচপি প্লান্টেশন প্রজেক্ট হাতে নেয়।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সেসের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনের তত্ত্বাবধানে ২০০৫ সালে শুরু হয় বনায়নের কাজ। তার পরিকল্পনায় বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছসহ স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি বনজ, ফলদ ও ঔষধি প্রজাতির বাগান গড়ে উঠেছে। এই গবেষকের মতে, বাণিজ্যিক নয়; বাগানের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো- বিপন্ন বা বিরল প্রজাতির বৃক্ষ সংরক্ষণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।

প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা জানান, বনায়নের মূল উদ্দেশ্য পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, ক্ষয়ে যাওয়া পাহাড়ি ভূমি বনায়ন, দেশি প্রজাতির বৃক্ষের বাগান সৃজনের মাধ্যমে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বিভিন্ন ধরনের পশুপাখির নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি, বন বিষয়ক শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ সৃষ্টি এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। সর্বোপরি সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের হাতে সবুজ বাংলাদেশ তুলে দেওয়া।

অধ্যাপক জসীম উদ্দিন আমাদের সময়কে জানান, পুরো ভূমি জরিপ করে পাঁচ একরবিশিষ্ট ৩৪টি ব্লকে বনায়ন পরিকল্পনা করেন। এখানে বিজ্ঞানসম্মত একক ও মিশ্র ব্লক পদ্ধতিতে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদি ৯০ প্রজাতির বনজ, ফলদ ঔষধি বৃক্ষের ২ লাখ ১৭ হাজার চারা রোপণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, একজন গবেষক হিসেবে বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির গাছসহ বনজ, ফলদ ও ঔষধি প্রজাতির বাগানের পরিকল্পনা আমিই করেছি। ভূমির উপযুক্ততা অনুসারে গাছ লাগিয়ে বাগান সাজানো হয়েছে। পিএইচপি ফ্যামিলি কাজটি লাভের উদ্দেশ্যে করেনি; পরিবেশ রক্ষায় করেছে। এটি পরিকল্পিত বিশেষায়িত বনায়ন প্রকল্প।

এ ধরনের বনায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যয়বহুল, কষ্টসাধ্য এবং সময়সাপেক্ষ মন্তব্য করে বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. রফিকুল হায়দার বলেন, প্রকল্পটিতে ভালো কিছু হবে; কারণ এখানে বিশ^বিদ্যালয়ের একজন নামকরা শিক্ষক আছেন।

বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারণে সীতাকু-ে যখন বন-পাহাড় উজাড় হচ্ছে, সেখানে পিএইচপি ফ্যামিলির এমন উদ্যোগ অনন্য উদাহরণ। মানুষের মাঝে আগ্রহ বাড়াতে এ ধরনের প্রকল্পে সহায়তার পাশাপাশি উৎসাহ দিতে সরকারি সংশ্লিষ্ট বিভাগের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন বন ও পরিবেশসংশ্লিষ্টরা।

বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার না করে বিশাল ভূমিতে ব্যয়বহুল বনায়ন প্রকল্পের আগ্রহ নিয়ে কথা বলেছেন পিএইচপি ফ্লোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমীর হোসেন সোহেল। তিনি বলেন, আমার বাবা পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান আলহাজ সূফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান অনেক গুণের অধিকারী। সন্তান হিসেবে আমি তার কাছ থেকে মানুষ ও প্রকৃতির প্রেম পেয়েছি। কারণ প্রকৃত ভালোবাসা না থাকলে এ ধরনের কাজ করা যায় না।

জানা গেছে, বিগত ১৭ বছরে বনায়ন প্রকল্পে ২ লাখ ১৭ হাজার ৪০৫টি বিভিন্ন প্রজাতির চারা রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ প্রকারের ২ লাখ ২১৬ অর্থকরি, ৩০ প্রকারের ফলদ গাছের ১৪ হাজার ৮৪৬, লুপ্তপ্রায় ১৫ প্রজাতির ১৯১ এবং ৮ প্রজাতির ২ হাজার ১৫২টি গাছ লাগনো হয়েছে।

২০০৫ সালে ২৯ হাজার ৮৫৪, ২০০৬ সালে ২৮ হাজার ১৪৪, ২০০৭ সালে ৪৫ হাজার ৩৮০, ২০০৮ সালে ১৮ হাজার ৪৮০, ২০০৯ সালে ৫৭ হাজার ৪৮৯, ২০১০ সালে ২২ হাজার ৫০০, ২০১২ সালে ২৫৩, ২০১৬ সালে ২ হাজার ৮৪, ২০১৭-২০১৮ সালে ৬ হাজার ৩৫৮, ২০১৯ সালে ৬ হাজার ৮৭, ২০২১ সালে ৭৭৬টি গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে।

অর্থকরি গাছের মধ্যে রয়েছে- মেহেগনী, গামার, চিকরাশি, সেগুন, লালচন্দন, স্বেতচন্দন, জারুল, করই, গর্জন, আকাশমণি, শিলকরই, পিতরাজ, শাল, হাইব্রিড আকাশি, আগর, তেঁতুল করই, কালি করই, রাজ করই, লৌহকাঠ, তেলসুর, শিশু, সিভিট, মেলালুকা, ঢাকিজাম, মিনজিয়াম, দেবদারু, হিজল, চম্পা, চাঁপালিশ, বাঁশ (দেশি ও থাই), কেরং, শিমুল, ল্যাম্বো, কাঠবাদাম ইত্যাদি।

ফলদ গাছের মধ্যে রয়েছে- পুতিজাম, মাল্টা, পেসতা, জাম, জলপাই, কাঁঠাল, নারিকেল, আম (দেশি, হিমসাগর, বারমাসি, আম্রপালি), লিচু, আমড়া, জাম্বুরা, ডালিম, লেবু, বেল, কমলা, আমলকি, তেঁতুল, কালোজাম, খেজুর, আপেল কুল, লটকান, চালতা, গোলাপজাম।

বিরল প্রজাতির উদ্ভিদ- বনগাব, পাইন, কানজালভাদি, সিটন, মেলগোটা, বক্স বাদাম, মহুয়া, বরতা, কাউফল, কদম, সোনালি, পুনাইল, বরুনা, ছাতিন। ঔষধি- নাগেশ^র, অশোক, অর্জুন, নিম, বহেরা, হরীতকী, তেজপাতা, কাবাবচিনি।

জানা গেছে, সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির ছায়ায় বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয়ে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে দেশের অন্যতম প্রধান শিল্পগোষ্ঠী পিএইচপি ফ্যামিলি। বিভিন্ন ব্যবসায়িক ও শিল্প উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি শিল্পায়নের ফলে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থপনা এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পপণ্য উৎপাদন পিএইচপি ফ্যামিলির অন্যতম ব্যবসায়িক নীতি।