ঢাকা, মঙ্গলবার ২৩, ডিসেম্বর ২০২৫ ২১:২২:১৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
‘সরকারকে অবশ্যই মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে’ দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভিসা সেবা বন্ধ ঘোষণা প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বৈঠক কলকাতায় বাংলাদেশ হাইকমিশন ‘না রাখতে’ দেওয়ার হুমকি শুভেন্দুর ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন তারেক রহমান দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দামে সোনা

রাজধানীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বেহাল অবস্থা

আফরোজা ফিরোজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত : ০৮:০৭ এএম, ১৩ নভেম্বর ২০১৩ বুধবার

রাজধানী ঢাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বেহাল অবস্থা৷ সরকারী পর্যায়ে বহু অনুদান ও প্রণোদনা দেয়া সত্ত্বেও বিদ্যালয়গুলোর অবস্থায় কোন পরিবর্তন নেই৷ বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অবকাঠামোগত সমস্য৷ এমনকি রয়েছে পানি, বিদু্যত্‍সহ টয়লেট সমস্যা৷ গত কয়েকদিন ঢাকার কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরজমিনে পরিদর্শনে জানা গেছে গত এক দশকেও এ বিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়নের কোনও ছোঁয়া লাগেনি৷ শিক্ষক ও পিয়ন সংকট ঃ মোহম্মদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের অভাব৷ খিলগাঁও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশপাশে বিক্রি হয় মাদক দ্রব্য৷ শানত্মিনগর কো-অপারেটিভ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই ঝাড়ুদার ও পিয়ন৷ শিক্ষার্থীরা নিজেরাই ঝাড়ু দেয় ক্লাসরুম৷ রায়ের বাজার রাজ মুসুরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজস্ব প্রবেশ দ্বার বন্ধ রেখে অন্য আরেকটি বিদ্যালয়ের গেট ব্যবহার করা হয়৷ ঢাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষাপ্রদান পদ্ধতি নিম্নমানের৷ রয়েছে চরম শিক্ষক সংকট৷ কোনো কোনো স্কুলে আছে মেট্রিক পাশ শিক্ষক৷ বিদ্যালয়গুলোর বাহ্যিক অবস্থা নাজুক৷ রয়েছে ভবন সংকট ও শিক্ষা উপকরণ স্বল্পতা৷ শিক্ষকদের বিভিন্ন সরকারী কর্মসূচিতে নিযুক্ত করা হয়৷ জন্মনিয়ন্ত্রন কর্মসূচি, শিশু জরিপ কর্মসূচি এবং নির্বাচনী ভোটার তালিকা তৈরিতেও তাদের কাজ করতে হয়৷ এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, শিক্ষককের স্বল্পতা, ছাত্র-ছাত্রী ঝরে পরা ও জবাবদিহিতার অভাব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মান নেমে যাওয়ার জন্য দায়ী৷ রাজধানীর বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে বিদ্যালয় বসছে পরিত্যক্ত ভবনে৷ দেয়ালে উঠেছে আগাছা৷ শ্যাওলা পড়ে সঁ্যাতস্যাতে দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের বিজ্ঞাপনে ভরা৷ শতকরা ৯৮ ভাগ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ৷ বিদ্যালয় কক্ষ সপ্তাহে একদিনও ঝাড়ু দেওয়া হয় না৷ নেই পাখা, নেই পর্যাপ্ত বিদু্যত্‍৷ দেয়া হয় না টিফিন৷ নেই ক্যান্টিন৷ অথচ প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র বলছে, এক চতুর্থাংশ প্রাথকি বিদ্যালয়গুলোর শ্রেণী কক্ষে বৈদু্যতিক বাতি ও পাখা রয়েছে৷ পরিসংখ্যান মতে, দেশে সরকারী ও বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট সংখ্যা ৮০ হাজার ৩`শ ৯৭টি৷ সরকারী বিদ্যালয় ৩৭ হাজার ৬`শ ৭২টি৷ রাজধানী ঢাকায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ২৯৫টি৷ মোট শিক্ষার্থী ৬ লাখ ৯১ হাজার ৯২৮ জন৷ ছাত্রের সংখ্যা ৩ লাখ ২৭ হাজার ৬১০৷ ছাত্রীর সংখ্যা ৩ লাখ ৩৪ হাজার ৩১৮৷ প্রধান শিক্ষককের সংখ্যা ২৯৬ জন, সহকারী শিক্ষক ২ হাজার ৭২ জন৷ প্রাথমিক শিক্ষায় প্রথম শ্রেণীতে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে৷ শ্রেণী বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকে৷ সরকারী হিসাবে ২০১২ সালে শিক্ষার্থী ভর্তির হার ছিল ৯৯.৪৭ শতাংশ৷ প্রাথমিকে ঝরে পড়ার হার ২১ শতাংশ৷ ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল জানায়, ঝরে পড়ার হার ২৯ দশমিক ৭ শতাংশ৷ কারণ হিসেবে এ সংস্থাটি বলে শিক্ষার গুনগত মানের অভাব, শিক্ষার্থীদের আয়মূলক কাজে যুক্ত থাকা, শিক্ষার ব্যয় নির্বাহ করতে না পারা, বিদ্যালয়ে অনিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম ও অনিয়মিত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে না আনা৷ এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, পরীক্ষায় ঝরে পড়ার হার কমেছে৷ অভিভাবকদের আনত্মরিকতা ও শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনযোগী হয়ে ওঠায় ঝরে পড়ার হার কমানো সম্ভব হয়েছে৷ এ ছাড়া পরীক্ষা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের যে ভীতি ছিল তা শিশুদের কমেছে৷ সব মিলিয়ে লেখাপড়ার ধারাবাহিকতায় ইতিবাচক ফল পাওয়া গেছে৷ তবে বাংলাদেশে এখনও ১০ শতাংশ শিশু স্কুলে যায় না৷ এদিকে ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত মোহম্মদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থী ৭`শ ৩০ জন৷ ২০০৭ এ ছিল মোট ৬`শ ৫৭ জন৷ বর্তমানে ৩`শ ৭০ জন ছাত্র ও ৩`শ ৫৪জন ছাত্রী৷ মোহম্মদপুর থানাধীন ১৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাড়ে ১২ হাজার৷ মোহম্মদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কামরুন নাহার কানত্মা জানান, এখানে সব কিছুরই সংকট৷ যেমন শিক্ষকের অভাব রয়েছে তেমনি নেই চেয়ার, বেঞ্চ, ফার্নেল বোর্ড৷ একটি বেঞ্চে ৪ জন বসে৷ আর ৪ জন শিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে থাকে৷ রয়েছে পিয়নের অভাব৷ শিক্ষক মাত্র ১৬ জন৷ তার মধ্যে ৪ জন ছুটিতে৷ কেউ মাতৃত্বকালীন ছুটিতে আবার কেউ কর্মশালায়৷ দুটি পদ খালি৷ শানত্মিনগর কো অপারেটিভ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে ক্লাশরুম সংকট৷ মাত্র চারটি রুমে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্লাশ করে৷ ক্লাশ চালাতে হয় চার শিফটে৷ প্রধান শিক্ষক তোহা পাটোয়ারী জানান, শিফটিং ক্লাশ করায় শিক্ষকদের ওপর চাপ পড়ে৷ সকাল ছয়টা থেকে শুরু করে বিকেল পাঁচটা পর্যনত্ম ক্লাশ নিতে হয়৷ শিক্ষকদের আলাদা বসার ঘর নেই৷ আলমারী দিয়ে আড়াল করে বসার জায়গা করা হয়েছে৷ রয়েছে শিক্ষক সংকট৷ মাত্র ৯ জন শিক্ষক৷ প্রয়োজন ১৫ জনের৷ শিক্ষা সচিব কামাল আব্দুল নাসের বলেছেন, বিভিন্ন রকমের প্রশিক্ষণ ও ছুটিতে থাকার কারণে রয়েছে শিক্ষক সংকট৷ শিক্ষা নিয়ে বেসরকারি সংস্থাগুলোর মোর্চা গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সরকারি স্কুলগুলোর শিক্ষার পরিবেশ আরও শিশুবান্ধব করতে হবে৷ এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মেধাবী শিক্ষক নিয়োগ এবং শিক্ষকদের বেতন ভাতা বাড়ানোর পাশাপাশি অভিভাবকদের মানসিকতা বদলাতে হবে৷ ১৫টি বিদ্যালয়ের জমি দখলঃ ভূমিদসু্যরা কেবল বসতবাটি ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের জমিই দখল করে না৷ স্কুলের জমিও দখলে নেয়৷ সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে ঢাকার ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা৷ চলছে মামলা৷ চলছে দেন দরবার৷ কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না৷ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা বেদখল হয়ে গেছে দীর্ঘদিন আগেই৷ বিদ্যালয়ের জমিতে ভবন, ঘর ও দোকান করা হয়েছে৷ কাপ্তানবাজারের খোদাবঙ্ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় দখলের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে৷ মোহম্মদপুর টাউন হল সংলগ্ন শাহীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩১ শতাংশ জমি দখল হয়ে গেছে৷ এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৮ সালে৷ দখলকৃত জায়গায় বসবাস করছে আটকে পড়া পাকিসত্মানীরা৷ ওরাই খাজনা দেয়৷ আশপাশের বাসিন্দারা অভিযোগ কওে বলেন, এরা সবাই ভোটার৷ তবে ক্যাম্পে না থেকে তারা থাকে স্কুলের জায়গা দখল করে৷ স্কুলের প্রধাণ শিক্ষক শুক্লা ব্যার্ণাজী জানান, এখানে শিক্ষার্থী মাত্র ১`শ ৫০ জন৷ পরিবেশের জন্য কেউ এ স্কুলে আসতে চায় না৷ সবাই একেবারে নিম্নবিত্ত৷ তবে পড়াশোনায় ভাল৷ গত প্রাথমিক পরীক্ষা সবাই পাশ করেছে৷ এখানে পিওন দু`জন৷ একজনের বেতন মাত্র ২`শ টাকা৷ মোহম্মদপুরের থানা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহানা আহমেদ বলেন, স্কুলের জমি দখলমুক্ত করা দরকার৷ আমরা চেষ্টা করছি৷ নাজিরাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়৷ এর দশ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে নাজিরাবাজার উচ্চবালিকা বিদ্যালয়৷ এ স্কুল প্রাঙ্গণে প্রায় প্রতি সপ্তাহে চলে বিয়ের রান্নাবান্না৷ স্কুলের ভেতর মঞ্চ৷ বড় হাঁড়িতে চলে রান্না৷ কোতয়ালি থানার শিক্ষা কর্মকর্তা রুমানা সাবি্বর বলেন, আমরা স্কুল কর্তপক্ষকে বলেছি তারা যেন এসব রান্না বান্নায় রাজি না হন৷ স্কুল কর্তর্ৃপক্ষ জানায়, তারা বার বার প্রতিবাদ করলেও কোনও কাজ হয়নি৷ ৯৬ সালে নিজ জমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় মতিঝিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ ২০০৭ সালে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ন ঘোষণা করা হয়৷ এর ফলে ঐ স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করতে হয় পোষ্ট এন্ড টেলিগ্রাফ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে৷ নতুন ভবন করতে গেলে বাঁধা দিয়ে জমিটি দখল করে নেয় পাশের কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ শেরে বাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৯৬ শতাংশ জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত৷ এ স্কুলের ৩৩ শতাংশ জায়গা দখল হয়ে গেছে৷ কামরাঙ্গীরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪২ শতাংশ জমির মধ্যে ১০ শতাংশই দখল হয়ে গেছে৷ ওয়ারীর এম এ আলীম প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১১ শতাংশ জমির ৫ শতাংশই দখল হয়ে গেছে৷ সেখানেও উঠেছে পাঁচতলা ভবন৷ গেন্ডারিয়া মহিলা সমিতি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মোট জমি ৩৭ শতাংশ৷ স্কুলের দখলে রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ৷ সামাজিক শিক্ষাকেন্দ্র সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চার কাঠা জায়গা দখল হয়ে গেছে৷ ১৯৬২ সালে বেইলী রোডে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০৷ এ ছাড়া এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুরিটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাচকৃঢ়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও হাজী ইউসুফ আলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গাও দখল হয়েছে অনেক আগেই৷ ১২ নভেম্বর`২০১৩