বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ দুটি অবিচ্ছেদ্য শব্দ। বাঙালী জাতির হৃদয়ের গভীরের একটি শব্দ ‘মুুক্তিযুদ্ধ’। মুক্তিযুদ্ধে কোন দল বা গ্রুপের একক অবদান আছে এটা বলা যাবে না।

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার। ১৯৯৪ সালের ২৬ জুন দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মারা যান।

প্রস্তাবিত ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানো হয়েছে। দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচির আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। 

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত নারী মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানে দেশে স্মৃতিস্তম্ভ করার দাবি জানিয়েছেন নারী নেত্রী ও সাংবাদিকরা। সেই সঙ্গে গণভবনসহ রাষ্ট্রীয় যেকোনো অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা মায়েদের অতিথি করারও আহ্বান জানান তারা। 

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান আহমেদ এমপি বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি আমাদের বীরঙ্গনা মা বোনের নাম, তাদের ত্যাগ বাঙালি জাতীর ইতিহাসে আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। প্রতিটি বীরঙ্গনা এদেশের প্রতিটি বাঙ্গালির কাছে মাতৃতুল্য।

মুক্তিযুদ্ধে পুরুষের অংশগ্রহণ নিয়ে আলোচনা হলেও নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে তেমন কোন আলোচনা হয় না। দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি হলেও আজও নারী মুক্তিযোদ্ধদের নামের কোনো তালিকা হয়নি।

‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে/বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না।/দুঃসহ এ বেদনার কণ্টক পথ বেয়ে/শোষণের নাগপাশ ছিঁড়লে যারা/আমরা তোমাদের ভুলব না।’

মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখা বীরপ্রতীক তারামন বিবি আর নেই। শুক্রবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কুড়িগ্রামে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬১ বছর। তিনি স্বামী, এক ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষ অংশগ্রহণ করেছে। তাদের সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আক্রমণে পাক বাহিনী পরাজিত হয়। সর্বস্তরের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণের প্রতীকী চিহ্নই `অপরাজেয় বাংলা`।

একাত্তরের বীরাঙ্গনা রমা চৌধুরী আর নেই। আজ সোমবার ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। রমা চৌধুরীর বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

১৮ আগস্ট ছিলো মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস। হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার প্রত্যন্ত হাওর অঞ্চল কাগাপাশা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির নাম মাকালকান্দি।

১৯৭১ সালে নির্যাতিত আরও ৩৮ জন বীরঙ্গনাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। সম্প্রতি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৫৪তম সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে। এই ৩৮ জনসহ মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাওয়া বীরাঙ্গনার সংখ্যা হলো ২৩১ জন।

মুক্তিযোদ্ধা রাবেয়া খাতুন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বয়স ছিলো মাত্র ১৪। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দীর্ঘ নয় মাস দেশের ভেতরে থেকে কাজ করেছেন তিনি।

অসোমনি। বয়স ষাটের বেশি। মুক্তিযুদ্ধে স্বামীকে হারিয়েছেন। দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে করতে আজ যেন ক্লান্ত। ঘোলা চোখে তাকিয়ে থাকেন খোলা আকাশের দিকে। তার কোনো দাবি নেই। তিনি বলেন, হামরা কিছুই চাহি না। শুধু স্বামী হত্যার বিচার চাই। ৪৭ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকসেনাদের গুলিতে অসোমনির স্বামী-দেবর, ভাইসহ পরিবারের পাঁচ জন নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমরা আলোচনা করি, টিভির টক শো কিংবা চায়ের টেবিলে এ বিষয়ে আলোচনার ঝড় তুলি। কিন্তু আমাদের আলোচনায় বেশিরভাগ সময়ই মুক্তিযোদ্ধা নারীদের নাম উঠে আসে না। কিংবা তাদের কৃতিত্ব বা অবদানের কথা প্রকাশ করা হয় না।

প্রাচ্যের অক্সফোর্ড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সার্ভেন্ট কোয়ার্টার। সরু গলি আর ঘুপচি ঘরের মাটির দেয়াল সর্বত্র শুধু রক্ত আর রক্ত। তাজা টকটকে লাল রক্তে ভেসে গেছে মেঝের নিজস্ব রঙ। ছোপ ছোপ রক্তের মাঝে একাকী আপন মনে চিৎকার করছে একটি শিশু।

পাকিস্তানি মেজর তাঁকে দেখে বলেছিলেন- একে তো বাঙালি মনে হয় না। মনে হয় অন্য জাত। হ্যাঁ তিনি বাঙালি নন, তিনি খাসিয়া নারী। খাসিয়া ‘মুক্তি বেটি’ হিসেবেই তিনি অধিক পরিচিত তাঁর এলাকায়। 

আমাকে যখন জানানো হলো আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উপলক্ষ্যে কীর্তিমতী নারী অ্যাওয়ার্ডের জন্য আমি মনোনিত হয়েছি, আমি নিজে কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। কেউ কোনোদিন আমার কাজের প্রশংসা তো দূরের কথা আমার কাজে কেউ খুশি হয়েছে এমন কাউকে খুঁজে পাইনি।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, নারী তার সর্বাত্মক শক্তি নিয়োগ করেছিল স্বাধীনতার মতো একটি বড় অর্জনে। যুদ্ধে পুরুষের পাশাপাশি নারী অংশগ্রহণ করেছিল জীবনবাজি রেখে।

স্বাধীনতার জন্য কত মানুষকে যে জীবন দিতে হয়েছে, কত পরিবারকে যে কতভাবে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে, যার রেস এখনো সে সব পরিবারে চলছে, তার কতুটুকুই বা আমরা জানি! 

সবকটা জানালা খুলে দাও না/ওরা আসবে চুপি চুপি/যারা এই দেশটাকে ভালোবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ…। হ্যা। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও আমরা অপেক্ষা করি তাদের জন্য যারা নিজেদের প্রাণের বিনিময়ে আমাদের দিয়ে গেছেন একটি ভূ-খণ্ড, একটি মুক্ত দেশ। আমরা তাদের ভুলিনি, তাদের ভুলতে পারি না।

বিজয়ের মাসে চলে গেলেন সিরাজগঞ্জ জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা রাজুবালা দাস (৭০)। শেষকৃত্যর আগে আজ সকালে তাকে রাষ্ট্রীয় সম্মান প্রদর্শণ করা হয়। প্রয়াত রাজুবালা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজ বাড়িতে পাক-বাহিনীর আক্রমণের শিকার হন।